সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর খসড়া মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। চালকের সাজা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর, অপরাধ অজামিনযোগ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি। একটি পত্রিকায় এই আইনের সারসংক্ষেপ এভাবেই করা হয়েছে। নতুন আইনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, চালক উদ্দেশ্যমূলকভাবে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হত্যাকা- ঘটালে দ-বিধির ৩০২ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে মৃত্যুদ-, তবে সেটা নির্ভর করবে তদন্তের উপর।
আইন নিয়ে বিতর্ক উঠতেই পারে এবং যে-কোনও গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বিতর্ক উপস্থিত হওয়াই স্বাভাবিক। বলা হচ্ছে এই আইনে দুর্ঘটনার সম্পূর্ণ দায় চালকের উপর চাপানো হয়েছে। আসলে সড়ক দুর্ঘটনা কেবল চালকের দোষে সংঘটিত হয় না, এর পেছনে অন্যান্য আরো অনেক কারণ থাকে। সে-কারণগুলোর সাথে সংশ্লিষ্টদেরকে এই আইন দায়মুক্তি দিয়েছে। চালককে দিয়ে অতিরিক্ত সময় গাড়ি চালানো, সড়কে চলমান অন্য অবৈধ যান, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি সড়কে নামানো, গাড়ির ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ ইত্যাদির কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। খসড়া আইনটিতে সে-সব দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কোনও উল্লেখ না থাকায় প্রকৃতপ্রস্তাবে দায়ীরা এই আইনের আওতায় দায়মুক্তি ভোগ করবেন বলে অনুমিত হচ্ছে এবং এমন অনুমিতি একেবারে অমূলক ও অযৌক্তিকও নয়। তাছাড়া কোনও পথচারীরও তো দোষ থাকতে পারে?
এই আইনটির খসড়া গত সাত বছর যাবৎ ঝুলে ছিল এবং পরিবহন খাতের স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে অনেক ধারা বদল হয়েছে বলে কোনও কোনও পত্রিকায় খবর বের হয়েছে। সে যাই হোক, একটা বিষয় তো স্পষ্ট যে, আইনে চালককে দায়ী করে আইন করা হলেও দুর্ঘটনার জন্য চালক ছাড়া অন্য যারা দায়ী তাদেরকে এই আইনের আওতায় আনা হয়নি। যেমন যিনি মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি রাস্তায় নামালেন কিংবা পাঁচ/ছয় ঘণ্টারও অধিক সময় ধরে চালককে গাড়ি চালাতে বাধ্য করলেন।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পক্ষে আছে দেশের সবাই, সকল মানুষ। কেউই ঘর থেকে বেরিয়ে সড়কে উঠে প্রাণ হারাতে চায় না। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, এই অন্দোলনের পক্ষে কেবল নেই পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। কয়েকটি টাকা উপার্জনের লোভে নিরাপদ সড়কের বিপক্ষে থেকে তারা দেশের মানুষের নিরাপদে চলাফেরার সাংবিধানিক অধিকারকে ক্ষুণœ করে প্রকারান্তরে মানুষ খুন করার লাইসেন্স পেতে পারেন না। এমন হলে আইনটা যেমন হবে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তেমনি হবে গুরুতর অন্যায়। এমনটা হতে পারে না। আমাদের মন্ত্রিসভাকে, সংসদকে, আইন প্রণেতাদেরকে, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদেরকে বিষয়টি নিয়ে আরো ভাবতে হবে। ভাবনা-চিন্তা করে সকল দিক রক্ষা করে একটি আধুনিক ও সুসমন্বিত আইন প্রণয়ন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আইনটির প্রতি এমন সমালোচনা করার অবকাশ যেনো কেউ না পায় যে, ভারতের বা মিয়ানমারের আইন দেখিয়ে বলে, ২০১৮ সালে উন্নত প্রযুক্তির যুগে এসে আইন প্রণয়ন করেও আমরা পিছিয়ে আছি এবং দু’দিন পরে আবার আইন বদলানোর তোড়জোড় শুরু করতে বাধ্য হই।