মাদকাসক্ত ছেলের মারধরের বিচারপ্রার্থী হয়েছেন এক বয়োবৃদ্ধ বিধবা মা। তিনি গ্রামপঞ্চায়েতের কাছে বিচার চেয়ে বিচার না পেয়ে শেষ পর্যন্ত থানা কর্মকর্তার বরাবরে ধরনা দিয়েছেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মৌখিক অভিযোগ রেকর্ড করেছেন। তারপর কী? আপাতত অবস্থা অবগতির বাইরে।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, “দোয়ারায় ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মা ॥ ‘বিচার চাই না, মাইর থাইক্কা রেহাই চাই’।” কান্নাকাতর মায়ের ফরিয়াদ প্রকাশ পেয়েছে এই শিরোনামে। পুত্র কর্তৃক নিপীড়িত মায়ের এই বিলাপের বিনিময়ে তাঁকে থানার পক্ষ থেকে প্রতিকারস্বরূপ পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে ‘মৌখিক অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে’ মাত্র। সারা বাংলাদেশে এভাবে কোথায় কতো সংখ্যক বিচারপ্রত্যাশী মানুষ প্রতিনিয়ত দাপ্তরিক আশ্বাসের ঝুলন্তমূলো নাকের ডগায় নিয়ে কালাতিপাত করছেন কে জানে। এদেশে অত্যাচারিত হয়ে অভিযোগ করে অভিযোগের প্রেক্ষিতে আশ্বাসের মরীচিকা ভিন্ন বস্তুতপক্ষে কোনওরূপ প্রতিকার পায় না যারা। তথাকথিত গ্রাম্য পঞ্চায়েত ও থানার দাপ্তরিকতার মারপ্যাঁচে পড়ে বিচারের বাণী নীরবে কেবল কেঁদেই মরে, তার কোনও সুরাহা হয় না। প্রায়ই পত্রিকায় খবর বেরুয়, কোনও এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করে অভিযুক্তরা গ্রাম পঞ্চায়েত বা জনপ্রতিনিধির তঞ্চকতা ও থানার দাপ্তরিক কৌশলের খপ্পরে পড়ে প্রাণহানির হুমকির মোকাবেলা করতে পারে না, বরং প্রকারান্তরে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়, এবং ধর্ষকরা বুক ফুলিয়ে সমাজের বুকে তা-ব নৃত্যের আসর বসায়। কোনও মাদকাসক্ত ছেলে মাকে অত্যাচার করলে গ্রামের বৃহত্তর সমাজের, গ্রামপঞ্চায়েতের, জনপ্রতিনিধির, আইন প্রয়োগকর্তার কী? তাঁরা প্রত্যেকেই তো পুঁজিবাদের প্রতিনিধি, পুঁজিবাদ তাঁদের উপর ভরসা করেই চলে, আর মাদকব্যবসা পুঁজিবাদের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। পুঁজিবাদী পদ্ধতিতে সব কীছু বিক্রি হয়ে যায়। কিশোরীর যৌবন, অভিভাবকের দারিদ্র্য ও অসহায়ত্ব, পঞ্চায়েতের বিচার, সামাজিক প্রতিকার, আইন এইসব কীছু তঙ্কাদেবীর পায়ে বিসর্জন দিয়ে সমাজ তার আপন গতিতে চলমান এবং চলমানতার ফাঁকে অপূর্ব কৌশলে লাভের বখরা পৌঁছে যায় ঘাটে ঘাটে।
আমরা মাদকাসক্তি ও মাদকব্যবসার পক্ষপাতী নই। খারাপ সবকীছুই একদিন বন্ধ হয়ে যাবে। সমাজ বদলে যাবেই কোনও না কোনও সময়ে। সে বদলের অপেক্ষায় থাকার আগে আপাতত দোয়ারাবাজারের দুখী বয়োবৃদ্ধ মার্জিয়া খাতুনকে (৭০) মাদকাসক্ত পুত্রের অত্যাচার থেকে রক্ষা করার একটি বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মর্জি হোক। ‘মৌখিক অভিযোগ রেকর্ড করা’ পর্যন্ত যেনো প্রতিকারের কার্যক্রমটি সীমিত না থাকে। অচিরেই মাকে অত্যাচার করতে বিরত থাকতে পুত্রকে বাধ্য করা হোক।