গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল- “জেলা প্রশাসকের আরেকটি অনন্য উদ্যোগ : মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থানে এক হাজার কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষ রোপণ শুরু”। শিরোনামটির বাক্যাভ্যন্তরে শব্দবিন্যাসে কাব্যিকতা না থাকলেও, শিরোনামটি পাঠমাত্র অদূর ভবিষ্যতে একটি চৈত্র্যকল্পিক প্রাকৃতিক পরিপ্রেক্ষিতের সূচনা করে চেতনায়। সেটাকে একটি পরিপূর্র্ণ কবিতা না ভাবার কোনও অবকাশ নেই। নির্দিষ্ট কালপরিক্রমার পর এই এক হাজার কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতিনির্ধারিত যে রূপমাধুরী নিয়ে আবির্ভূত হবে, তার অপরূপত্বকে কল্পনা করে যে-কেউ কবি হয়েই উঠতেই পারেন। ভাষা আন্দোলনের মাসে, ফাল্গুনের সকাল কিংবা বিকেলে, এক হাজার কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে প্রস্ফুটিত রক্তলাল ফুলের রঙের সঙ্গে সুনামগঞ্জের জলজসবুজ প্রকৃতির আকাশনীল মিলেমিশে দশদিগন্ত রাঙিয়ে দিয়ে বসবে এক অপরূপ রঙের মেলা। কৃষ্ণচূড়া ফুল আর রক্তের উৎস এক নয়, কিন্তু রঙ এক। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির রঙও রক্তরঞ্জিত, লালে লাল।
বাঙালির মন অনুরাগ ও দ্রোহের অপরূপ এক মিথষ্ক্রিয়া। বাঙালির প্রাণের রঙ, আত্মপরিচয়ের রঙ, বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের রঙ, আন্দোলন-সংগ্রাম-স্বপ্নের রঙও লাল। বাঙালির মনন ও কবিতার রঙও লাল, এই অনিবার্যতা ইতিহাস নির্দিষ্ট। তাই বোধ করি জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলামের স্বপ্নপ্রকল্পের বিন্যাসের প্রতিষ্ঠাপূর্ণতার রঙটিও লাল। ‘এক হাজার কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষ রোপণ’ কোনও সাধারণ মানুষের কাজ নয়। সে এক অসাধারণ কবির কাজ। রবীন্দ্র-নজরুল কিংবা সুকন্ত-জীবনানন্দ প্রজাতির হোমোসুফিয়ান না হলে এমন কাজ কেউ করে না। কবি নাহলে কেউ প্রকৃতির পরিপ্রেক্ষিতের পার্থিবতায় অপার্থিব কবিতা সৃষ্টির স্বপ্নদ্রষ্টা হতে পারে না।
এই কবি সাবিরুল ইসলামকে সুনামগঞ্জ কখনো ভুলে যাবে না। একদিন এই এক হাজার কৃষ্ণচূড়া গাছের শাখায় প্রস্ফুটিত ফুল তাকে সুনামগঞ্জের পক্ষ থেকে জানাবে অভিবাদন। আর সেই সঙ্গে সুনামগঞ্জের মানুষের মনকে শহীদস্মৃতির পরশ বুলিয়ে করবে আরও সুন্দর, আরও সুরঞ্জিত।