সবিতা বীর ::
যৌবন হচ্ছে মানুষের জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সময়। তাই এই সময়ে প্রত্যেক মানুষের উচিত ভ্রমণের জন্য সময় ও বাজেট বরাদ্দ রাখা। সময় এবং সুযোগ আসলেই ভ্রমণে বেরিয়ে পড়তে হবে।
আমি অনেক দিন থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি, বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আমি সেইগুলো প্রিয় পাঠকদের সাথে শেয়ার করতে চাই।
আমি গিয়েছিলাম কলকাতা টু দিল্লী ভ্রমণে। কলকাতায় গিয়ে দেখলাম আমার স্বপ্নের মন্দির বেলুড় মঠ, দক্ষিণেশ্বর, কালিঘাট, সায়েন্স সিটি ইত্যাদি। আমরা হাওড়া স্টেশন গেলাম। সেখানে গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম মানুষের ঢল দেখে। এতোবড় স্টেশন এই প্রথম দেখলাম। আরও দেখলাম ট্রাম গাড়ি, নাম না জানা আরো কতকিছু। কতকিছু দেখি কিন্তু দেখি না শুধু আমার দেশের মানুষের মতো এমন আন্তরিক সুন্দর আতিথেয়তা।
তীর্থভ্রমণে কী যে আনন্দ তা বলে বুঝাবার মতো না। এ যেন স্বর্গীয় আনন্দ। আমি গিয়েছিলাম কামারপুকুর, গিয়েছিলাম জয়রামবাটিতে। অনেক ভাল লেগেছে। আরো গিয়েছিলাম তারেকেশ্বর তারকনাথ মন্দিরে। সেখানে পা-াদের যে বিশাল চাহিদা বলে বুঝাবার মতো না। তবে সেখানে অবশ্যই সাবধান থাকতে হয় নতুবা পকেট খালি হয়ে যাবে পা-াদের খপ্পরে পড়ে। গঙ্গার পবিত্র জলে ¯œান করে খুবই ভাল লাগল। বেলুড় মঠে ভোরের আরতি উপভোগ করলাম। মনে হয়েছে যেন পরমাত্মার সাথে মিশে গিয়েছি। আমার ভিতরে এতো সুন্দর ভাবনা আসার জন্য পরম করুণাময়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
আমার মনে হয় যে যত বেশি দেশ ভ্রমণ করবে সে তত বেশি জানবে। দিল্লি গিয়ে প্রথমেই গেলাম আগ্রায় তাজমহল দেখতে। তাজমহলে প্রবেশ করতে মাথাপিছু প্রবেশমূল্য ১ হাজার টাকা করে দিতে হয়। তারপর আমরা একে একে আরো বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যাই। দিল্লির রেডপোর্ট, হুমায়ন টম্ব, ইন্ডিয়া গেইট – সব জায়গাতেই খুব ভালো লাগলো। হোটেলে গেলাম দুপুরের খাবার খেতে। ভাতের দাম শুনেতো আমরা অবাক হয়ে গেলাম। এক প্লেট ভাতের দাম ৯০ টাকা! পরদিন আমরা যাই লোটাস টেম্পল দেখতে। যাই অক্ষয়ধাম মন্দির দর্শন করতে। অক্ষয়ধাম মন্দিরটি দেখে আমরা অভিভূত হয়ে গেলাম। এতো সুন্দর মনে হয় যেন স্বর্ণমন্দির। আমরা চলে গেলাম ফতেপুর সিটিতে সেখানে আমরা সেলিম চিশতির মাজারে গেলাম। এখান থেকে ওখানে ছুটে চলা। কারণ সময় তো বসে থাকে না। সময় ছুটে চলে আপন গতিতে। আমাদের ছুটি শেষ হতে চলেছে তো আমাদের এখন আপন নীড়ে ফিরে আসতে হবে। আমরা রাজধানী এক্সপ্রেসে চড়ে দিল্লি থেকে শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছে গেলাম। পরদিন আমরা প্লেনে কলকাতা থেকে ঢাকা চলে এলাম।
ভ্রমণে গেলে মন ভাল থাকে। তাছাড়া অনেক কিছু জানা যায়। তাইতো উন্নত দেশগুলোতে দেশ ভ্রমণকে এতো বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। আমাদের দেশ যত বেশি উন্নত হবে দেশের মানুষ তখন ভ্রমণের গুরুত্ব বুঝতে পারবে। দেশের বাইরে গেলে বুঝা যায় আমাদের অবস্থান কোন পর্যায়ে আছে। অন্যরা কত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
কুয়োর ব্যাঙ কুয়োর মধ্যে থাকলে সমুদ্র কি জিনিস তা বুঝতে পারবে না। সমুদ্রের বিশালতা বুঝতে হলে সমুদ্রের কাছে যেতে হবে। তবেই সমুদ্রের বিশালতা বুঝা যাবে।
বিদেশিরা ছাত্রজীবন থেকেই ভ্রমণ শুরু করে দেয়। তারা মনে করে ভ্রমণ হল শিক্ষার অংশ বিশেষ। যত বেশি ভ্রমণ করা যাবে তত বেশি জ্ঞান সমৃদ্ধ হবে। জ্ঞানের ভা-ার সমৃদ্ধ করতে হলে ভ্রমণের বিকল্প নেই। আমাদের সোনার বাংলাদেশেও ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন স্থান রয়েছে। যেমন- কক্সবাজার, কুয়াকাটা, রাঙ্গামাটি, মাধবকু-, জাফলং, জাকারিয়া পার্ক, ড্রিমল্যান্ড, শ্রীমঙ্গল টি গার্ডেন, মাধবপুরের কালেঙ্গা বন, সাতছড়ি বাগান, টাঙ্গুয়ার হাওর ইত্যাদি।
ইন্টারনেটের সুবাদে জানতে পারলাম মাধবপুরের কালেঙ্গা বনের কথা। গিয়েতো অবাক হয়ে গেলাম। এতো ঘন বন! সুন্দরবনের পরেই এই বনের স্থান। আমরা গাইড সাথে নিয়ে বন ঘুরে ঘুরে দেখলাম। বনের ভিতর যতই এগোচ্ছি গা ছমছম করছিল। মনে হচ্ছিল যেন বিশাল অ্যাডভেঞ্চার।
ভ্রমণের জন্য আমাদের উচিত কিছু টাকা বরাদ্দ রাখা। যাতে প্রতি বছর নির্বিঘেœ ভ্রমণে চলে যাওয়া যায়। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে অবশ্যই ভ্রমণে যাওয়া উচিত। উন্নত দেশগুলোতে যারা হোটেল-রেস্টুরেন্টে কাজ করে তারা তাদের ভ্রমণের টাকা রোজকার করে।
আমি আজো প্রতিদিন স্মরণ করি কামারপুকুরের ভ্রমণের সেই দিনগুলির কথা, স্মৃতিগুলির কথা। রামকৃষ্ণ ঠাকুর যে পাঠশালায় পড়তেন সেই লাহা বাবুর পাঠশালার কথা। কামারপুকুর, হালদার পুকুর ও ঠাকুরের নিজের হাতে লাগানো আম গাছটির কথা। এসব কালের সাক্ষী হয়ে আছে।
মানুষ আজকাল অনেক সচেতন হয়ে গেছে। মানুষ বুঝে গেছে যে আজকাল যা কিছুই করো না কেন বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে করতে হবে। প্রতিটা মানুষের উচিত শরীরে শক্তি-সামর্থ্য থাকতে থাকতে ভ্রমণের কাজটা সেরে নেয়া।
[লেখক সবিতা বীর, প্রভাষক, দিগেন্দ্র বর্মণ কলেজ, বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ]