1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১০ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

জননেতা আয়ূব বখত জগলুল : স্মৃতির মণিকোঠায় তুমি অমর

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই, ২০১৮

ম ফ র ফোরকান ::
(পূর্ব প্রকাশের পর)
প্রথমে অভিযুক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার এএনএম হায়দার আলীকে ভ্রূক্ষেপহীন লাগছিল আমার কাছে। তার অপরাধটাকে মার্জনার বা সহানুভূতির চোখে দেখে উদার মনের পরিচয় দিতে আমাকে অনুরোধ করেন আমি যে পত্রিকার সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি সেই ‘দৈনিক ইনকিলাব’-এর সিলেটের ব্যুরো চীফ নজরুল ইসলাম। এতে অভিযুক্ত নির্বাচন অফিসার হয়তো ধরে নিয়েছিলেন আমি বেড়াজালে আটকা পড়ে গেছি। বন্ধ হয়ে যাবে আমার নড়াচড়া। কিন্তু তদন্ত শুরু হলে আমার আচরণে ভুল ভাঙে তার। কালো চেহারার লোকটার মুখাবরণে এসে যোগ হয় যেন শ্রাবণের ঘনকৃষ্ণ মেঘ। তদন্তটা শুরু হলো। আমাদের অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া যাচ্ছিলো একের পর এক। যেখানেই হাত দিচ্ছেন তদন্তকারী উপনির্বাচন কমিশনার সেখান থেকেই বেরিয়ে আসতে শুরু করলো অবিশ্বাস্য এবং অকল্পনীয় সব দুর্নীতি আর অনিয়ম। এক কথায় বলতে গেলে, মউজদীনকে নির্বাচিত করতে গিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব নিয়ম-কানুনকে পদদলিত করা হয়েছিল এখানে। সবশেষে আবিষ্কৃত হয় এক মহাদুর্নীতি। এ ঘটনায় বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান তদন্তকারী উপনির্বাচন কমিশনার সিরাজুল ইসলাম। উত্তেজনার ¯পষ্ট ছাপ ফুটে উঠে তাঁর চোখে-মুখে।
নির্বাচনের আগে প্রকাশিত গেজেটে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২৪,৯৯৬ জন। তদন্তকারী কর্মকর্তার সামনে অভিযুক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার মিলিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন সর্বসাকুল্যে ২৩,৫২৭ জন ভোটারের তালিকা। অভিযুক্ত সাবেক জেলা নির্বাচন অফিসার ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের হাতে দেওয়া ২৩,৫৭১ জনের তালিকার মধ্যে আইনানুগ ভোটার হচ্ছে ২১,১২৬ জন। গেজেটে ভোটার সংখ্যা ছিল ২৪,৯৯৬ জন। ফলে কাল্পনিক ও মনগড়া ভোটার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩,৮৩৪ জন। কল্পনার সাগরে সাঁতরে সাঁতরে ‘কথিত জননন্দিত ব্যক্তি’র উদ্যোগে যাদের ভোটার বানানো হয়েছিল সেই তালিকার দরখাস্তের কোনটিতে সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসারের স্বাক্ষরের নিচে তারিখ নেই, কোনটিতে আবার স্বাক্ষর নেই- এমনতর কীর্তিকলাপ, যাচ্ছেতাই কাজ-কারবার বলে যাকে তাই করা হয়েছিল আয়ূব বখত জগলুলকে পরাজিত করতে।
ভোটার হওয়ার উল্লিখিত উদ্ভট আবেদনপত্রগুলোকে ৩ মাস পিছিয়ে ২০ অক্টোবর, ১৯৯৮ তারিখে মুদ্রিত দেখানো হয়েছিল। অর্থাৎ ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে ভোটার হওয়ার জন্য যারা আবেদন করেছিলেন তাদের নাম করিৎকর্মা জেলা নির্বাচন অফিসার এএনএম হায়দার আলী অক্টোবর ’৯৮ সালেই ভোটার তালিকাভুক্ত করে নেন।
আমাদের অভিযোগের ষোলকলা পূর্ণ হল। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে পেয়ে গেলাম সাপ। প্রবল সন্তুষ্টি নিয়ে বাড়ি ফিরলাম আমরা।
স্বপ্নেও কল্পনা করিনি এরপরও আরো বিস্ময় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। বিকেলে শহীদুজ্জামান ভাই তাঁর আইন পেশার বইপত্র নিয়ে ব্যস্ত। আমি তাঁরই বাসার ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ কান্নাকাটির মত বিদ্ঘুটে শব্দ এসে বাজল কানে। বুঝতে পারিনি প্রথমে আর আমলও দেইনি। কারণ এমন শব্দ করে কাঁদার কোন পরিবেশ নেই এখানে। তাই আন্দাজে আসছিল না এমন একটা কা-।
ভাবী অর্থাৎ শহীদুজ্জামান ভাইয়ের সহধর্মীণি হন্তদন্ত হয়ে এসে বললেন, “ফোরকান ভাই! তাড়াতাড়ি আসেন। দেখে যান একজন বয়স্ক লোক স্বজনের আব্বুর পায়ে ধরে কিভাবে কান্নাকাটি করছে।”
বলেন কী! শহীদুজ্জামান ভাইয়ের চেম্বারের দরজার সামনে গিয়ে চোখ যেন আমার ছানাবড়া। ভাবীও বিস্ময়াভিভূত। জোরে দু’হাতে পা ধরে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন আমাদের অভিযুক্ত সেই জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এএনএম হায়দার আলী- যিনি উল্টে দিয়েছিলেন ১৯৯৯ সালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনের ফল। জগলুর বিজয় মুকুট ছিনিয়ে নিয়ে পরিয়ে দেন মউজদীনের মাথায়। এই নির্বাচন অফিসারকে দেখছি এখন অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান চৌধুরী’র পায়ে। পা দুটো শক্ত করে ধরে লোকটা কাঁদছেন আর কি যেন বলে চলছেন। অপরদিকে পা ছাড়াতে শহীদুজ্জামান ভাই গলদঘর্ম। হাঁপিয়ে উঠেছেন রীতিমত। এমনি অবস্থায় নির্বাচন অফিসারের চোখে পড়ে যাই আমরা। সঙ্গে সঙ্গে ভাবী বলে চিৎকার করে অনেকটা দৌড়ের মত এগিয়ে আসতে থাকেন। ভাবী দৌড়ে পালিয়ে তাঁর রুমের দরজা আটকে দেন। আমি বাঁচি ড্রয়িং রুমের দরজা আটকে।
বেশ কিছুক্ষণ পর শহীদুজ্জামান ভাই এসে ডাকলেন আমাদের। সবাই এক সঙ্গে বসে শুনলাম পুরো ঘটনা।
শহীদুজ্জামান ভাই বললেন, ‘জেলা তথ্য অফিসার গফুর সাহেব ও সাবেক জেলা নির্বাচন অফিসার হায়দার সাহেব আমার চেম্বারে ঢুকলেন। আমি বসতে বললাম তাদের। গফুর সাহেব বসলেন। নির্বাচন অফিসার এ সময় জানতে চাইলেন আমার বাথরুমটা কোনদিকে। বাথরুমটা ছিল আমার চেয়ারের পেছনে। আমি আঙুলের ইশারায় দেখিয়ে দিয়ে আমার কাগজপত্র ঘাটাঘাটি চালিয়ে গেলাম। এমনি অবস্থায় বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে উপর্যুক্ত নির্বাচন অফিসার হুমড়ি খেয়ে এসে পা দুটো ধরে উচ্চস্বরে কান্নাকাটি জুড়ে দেন এবং বারবার বলতে থাকেন, আমি অজু করে এসে আপনার পায়ে পড়েছি। আপনি আমাকে বাঁচান। নইলে আমি মরে যাব। আমি সামান্য একজন পোস্ট পিয়নের সন্তান। জেলা নির্বাচন অফিসার পর্যন্ত আসতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। সইতে হয়েছে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত। আমার একটি মাত্র ছেলে। মাত্র ইন্টারে পড়ে। চাকরির কোন ক্ষতি হলে, ধ্বংস হয়ে যাবে আমার পুরো পরিবার। আমাকে মাফ করেন। বলুন, আমাকে মাফ করেছেন কিনা, নইলে আমি আপনার পা ছাড়ব না। বাকি দৃশ্য তো তোমাদেরই দেখা। পা ছাড়াতে কি পরিশ্রমটাই না করতে হয়েছে আমাকে। তারপর যখন আমি বলেছি, ঠিক আছে আপনি এখানে বসুন, শান্ত হোন। তারপর তিনি তোমাদের দিকে এগুলেন। ফিরে এসে কিছু সময় বসলেন চেয়ারে। এক পর্যায়ে বিদায় নিলেন আমার কাছ থেকে। যাবার সময় হাত দু’হাত ব্যবধান সৃষ্টি করে তথ্য অফিসার গফুর সাহেব বললেন, এখানে এসে এই লোকটা যে এমন একটা কা- করে বসবে তা ছিল আমার ধারণারও অতীত। আমাকে তিনি শুধু বলেছিলেন, আমি শহীদুজ্জামান চৌধুরী সাহেবের বাসায় একটু যেতে চাই। আপনাকেও আমার সঙ্গে যেতে হবে। এ কারণেই আমার আসা। বেচারার কা- দেখে আমি তো রীতিমত হতভম্ব।’
পরবর্তীতে উপ-নির্বাচন কমিশনারের তদন্ত রিপোর্টের একটি কপি আসে আমার হাতে। তাতে দেখা যায়, তদন্তকারী কর্মকর্তা সচিব নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নং উনিক/ চট্ট ২০৯৭০৯৯- ভোঃ বে ২৩৩৭ স্মারকে প্রেরিত তদন্ত প্রতিবেদনে সুনামগঞ্জ পৌর নির্বাচনের ভোটার তালিকার দুর্নীতির জন্য সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসার অর্থাৎ থানা পরিসংখ্যান অফিসার, থানা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার, সহকারী থানা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার (সুনামগঞ্জ সদর) ও রেজিস্ট্রেশন অফিসার / জেলা নির্বাচন অফিসারকে দায়ী করেন। উপনির্বাচন কমিশনারের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর দায়ী কর্মকর্তাদের কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয় তা আমার জানা নেই। একজন স¤পর্কে শুধু জানি। তিনি হলেন জেলা নির্বাচন অফিসার এএনএম হায়দার আলী। তদন্তের ছোবলে বেসামাল হয়ে যান তিনি। একদিন গোপালগঞ্জ শহরেই মোটর সাইকেলের চাপায় তিনি নিহত হন।
এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন যে, ১৯৯৯ সালের নির্বাচনের পূর্বে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মোট ভোটারের সংখ্যা লিখিতভাবে জানানোর জন্য আবেদন করলে উক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা আবেদনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীরকে বলেছিলেন, ‘আপনি একটা ছাগল’। উত্তরে মালেক পীর বলেছিলেন ‘জ্বি স্যার’। প্রকৃত ছাগল কে ছিল- মালেক পীর না জেলা নির্বাচন অফিসার হায়দার আলী? ১৯৯৯ সালে অনুষ্ঠিত উপর্যুক্ত নির্বাচনী নাটকটি কি প্রমাণ দেয় সম্মানিত পাঠক? (চলবে)

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com