সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। সম্প্রতি ভারতের একটি হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এই দুরারোগ্য রোগ স¤পর্কে নিশ্চিত হন তিনি। এই রোগের চিকিৎসার জন্য আরও কিছু পরীক্ষা করাতে ৪ আগস্ট আবারও তিনি ভারত যাবেন বলে জানান। তখন বায়োপসি (কোষের বিশেষ পরীক্ষা) করার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে ক্যানসারের কোন ধাপে আছেন তিনি।
এদিকে এমন দুঃসংবাদের সঙ্গে যুক্ত হলো অর্থ সংকট। কারণ, এই দুরারোগ্য ক্যানসার থেকে নিরাময়ের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। তাই সাদামাটা জীবনযাপনের এই কিংবদন্তি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। চেয়েছেন আর্থিক সহযোগিতা।
সুজেয় শ্যাম বললেন, সুস্থ-সুন্দর-সংগীতময় একটা জীবন কাটছিল। ভেবেছিলাম এভাবেই হয়তো সুন্দর পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারবো। কিন্তু কখনও যে ক্যানসারের মতো অসুখে আক্রান্ত হবো, তা ভাবিনি।
এই রোগের চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি উল্লেখ করে তিনি আরও বললেন, আর্থিকভাবে খুব সচ্ছল নই আমি। অর্থের পেছনে কখনও ছুটিনি। যে কারণে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা আমার জন্য অনেক কষ্ট হয়ে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমার এই চিকিৎসার জন্য পাশে দাঁড়ান তাহলে হয়তো তার সহায়তা আর বিধাতার কৃপায় এই রোগ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবো। আমার জন্য প্রার্থনা করবেন সবাই।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান এবং স্বাধীনতার প্রথম গানের সুরষ্রষ্টা সুজেয় শ্যাম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গীতিকার শহীদুল আমিনের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’ গানের সুর সংগীত করেছিলেন তিনি। এই গানের প্রধান কণ্ঠশিল্পী ছিলেন অজিত রায়।
সুজেয় শ্যামের অন্য গানের তালিকায় রয়েছে- রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি, আয়রে মজুর কুলি, আহা ধন্য আমার জন্মভূমি, রক্ত চাই রক্ত চাই, মুক্তির একই পথ সংগ্রাম ইত্যাদি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে গত বছর মুক্তিযোদ্ধার সনদ পান সুজেয় শ্যাম। ইউনিলিভারের প্রযোজনায় ২০০৯ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ৫০টি গান এই প্রজন্মের শিল্পীদের দিয়ে নতুন সংগীতায়োজনে গাইয়েছেন সুজেয় শ্যাম, সহযোগিতা করেছেন পার্থ বড়–য়া।
২০১৪ সালে স্বাধীনতা দিবসে শুদ্ধ সুরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মুখে। এর সংগীতায়োজনও করেছিলেন সুজেয় শ্যাম।
সুজেয় শ্যাম ১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা অমরেন্দ্র চন্দ্র শাহ ছিলেন একটি বিদ্যালয়ের সহকারী এবং ‘ইন্দ্রেশর-টি’ নামে একটি চা বাগানের মালিক। তার শৈশব কেটেছে সিলেটের চা বাগানে আর আঁকাবাঁকা পাহাড়ি এলাকায়। দশ ভাইবোনের মধ্যে সুজেয় ষষ্ঠ। সঙ্গীতে আগ্রহ জন্মায় সকালে প্রার্থনা সঙ্গীত শুনে। তাছাড়া তার ছোট বোন ও ভাই বেতারে গান গাইত। মা বাবাও ছিলেন নজরুল সঙ্গীত শিল্পী।
সুজেয় শ্যাম একজন গীটার বাদক ও শিশুতোষ গানের পরিচালক হিসেবে ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান চট্টগ্রাম বেতারে যোগদান করেন। পরে বড়দের অনুষ্ঠান পরিচালনা শুরু করলেও ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম বেতারে চাকরি ছেড়ে ঢাকা বেতারে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ঘোষণার পর শহীদুল ইসলাম রচিত তার সুরকৃত ও তার কণ্ঠে ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটি স্বাধীন বাংলা বেতারে বেজে উঠেছিল। ২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রধান সঙ্গীত প্রযোজক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি টুনাটুনি অডিও নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।