বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জে ধারাবাহিক ভালো ফলাফল ধরে রেখেছে জেলার সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত ও দুর্গম হাওরবেষ্টিত উপজেলার শাল্লা ডিগ্রি কলেজ। বিড়ম্বিত যোগাযোগ ও অবকাঠামোবিহীন পরিবেশের মধ্যেও ধারাবাহিক ফলাফল বজায় রাখায় কলেজের সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়েছেন এলাকার সুধীজন। চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় সুনামগঞ্জ জেলায় জিপিএ ৫ প্রাপ্তি ও পাসের দিক দিয়ে জেলায় সেরা ফলাফল করেছে কলেজটি। কলেজের ৪৮৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৪৩০ জন। পাসের হার ৮৮.৮৪%। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৭ শিক্ষার্থী।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সঙ্গে এখনো সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই এই উপজেলার। ‘বর্ষায় নায়, হেমন্তে পায়’ এই প্রবাদ এখনো প্রাসঙ্গিক উপজেলাবাসীর জীবনে। দুর্গম ও হাওর বেষ্টিত উপজেলাটির একটি গ্রামের সঙ্গে আরেকটি গ্রামেরও সরাসরি যোগাযোগ নেই। বর্ষায় নৌকা ছাড়া এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাওয়ার সুযোগ নেই। কলেজটিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য ন্যূনতন আবাসিক ব্যবস্থা না থাকলেও শিক্ষকদের আন্তরিকতার কারণে ধারাবাহিক ফলাফল ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, শাল্লা ডিগ্রি কলেজ ২০১৬ সালে ১১টি জিপিএ-৫ পেয়েছিল। পাসের হার ছিল ৯০। ২০১৭ সালে ৬টি জিপিএ-৫ ও ২০১৫ সালে ১৭টি জিপিএ-৫ পেয়ে জেলায় প্রথম হয়েছিল। ২০১৭ সালে পাসের হার ছিল ৮৩.৩৮%। এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে। দেখা গেছে যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তাদের বেশিরভাগই এসএসসিতে জিপিএ-৫ পায়নি। কিন্তু এই কলেজে এসে জিপিএ-৫ পেয়েছে তারা।
১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটির বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। ২৪ জন শিক্ষকের মধ্যে ৮ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। জনবল, অবকাঠামোসহ নানা সমস্যার মধ্য দিয়েই কলেজটি স্বাভাবিক পাঠদান অব্যাহত রেখেছে।
কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, এই মুহূর্তে কলেজে একটি ছাত্রাবাস সবচেয়ে জরুরি। দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা বর্ষা-হেমন্তে নিয়মিত কলেজে আসতে পারেনা যোগাযোগ বিড়ম্বিত এলাকায় বসবাসের ফলে। কলেজে একটি ছাত্রাবাস থাকলে তারা সেখানে অবস্থান করে ভালোভাবে লেখাপড়ার সুযোগ থাকতো। তাছাড়া শিক্ষকদের আবাসিক ব্যবস্থাও নেই বলে জানা গেছে। কলেজে কোন অডিটরিয়াম নেই। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কলেজের নানা অনুষ্ঠান শ্রেণিকক্ষে করা হয়।
কলেজের এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী সৌরভ দাস বলেন, আমাদের উপজেলাটি জেলার সবচেয়ে দুর্গম উপজেলা। এখানে কলেজে আসতে হলে বর্ষায় প্রতিটি গ্রাম থেকেই নৌকায় করে আসতে হয়। যার ফলে অনেকে নিয়মিত আসতে পারেনা। একটি উন্নত ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা থাকলে ছাত্ররা অবস্থান করে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারতো।
শাল্লা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ বলেন, আমরা শিক্ষকদের সবাই শিক্ষার্থীদের আন্তরিকভাবে পাঠদানের চেষ্টা করি। আমাদের অনেক শিক্ষক বাড়িতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়ালেখার খোঁজ নিতেন। তাদেরকে বিভিন্নভাবে দিকনির্দেশনা দিতেন। আমরা নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চেষ্টা করছি আমাদের মান ধরে রাখতে।