সত্যিকার অর্থে নতুন করে বোধ করি বলার কোনও কীছু নেই। যাই বলি না কেন, তা চর্বিতচর্বণের বেশি কীছু হবে না। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘সঙ্কট’ একটি অতি অতি পুরনো প্রসঙ্গ। এই প্রসঙ্গে নতুন করে কোনও কথা বলার নেই। গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, “সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় : শিক্ষক দরকার ৫২জন, আছেন ৩১জন”। দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়েই এমন শিক্ষক সঙ্কট লেগে আছে। তাছাড়া আছে শিক্ষা উপকরণের অপ্রতুলতাসহ লাগাতার অব্যবস্থাপনা। প্রকৃতপ্রস্তাবে শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্কটাপন্ন অবস্থা দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় মেধা তৈরি করতে পারছে না এবং এই অসম্পূর্ণতা দেশকে অনিবার্যভাবে পিছিয়ে রাখছে। বর্তমান অত্যাধুনিক বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে পাল্লা দিতে চাইলে দেশের শিক্ষার মানের উচ্চতাকে কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছে দিতেই হবে, এর কোনও বিকল্প নেই। প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক স্বল্পতা, মাল্টিমিডিয়ার পাঠদান স্থগিতাবস্থা, শিক্ষা উপকরণের অপ্রতুলতা, প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব রেখে দিয়ে রাষ্ট্রের উন্নতি কামনা করা আর মরা বৃক্ষের কাছে ফল প্রত্যাশা করা সমান কথা। বিদ্যালয়কে উন্নত না করলে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক লোকবলের অভাব যেমন আছে তেমনি থাকবে তো বটেই, এমনকি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে এবং সঙ্কট আরও ঘনীভূত হবে। শিক্ষাক্ষেত্রটি এভাবে ক্রমাগত উপেক্ষার শিকার হলে আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য মেধাসম্পন্ন ও দক্ষ নাগরিকের অভাব দেখা দেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শিক্ষাকে উন্নত করার জন্যে অবশ্যই শিক্ষাবাজেটকে যুগোপযোগী করে নিতে হবে। এই যুগোপযোগিতার একটাই অর্থ, আর সেটা হলো শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ানো। ব্যয় না বাড়ালে বিশ্বমানের শিক্ষা অর্জন করা কীছুতেই সম্ভব নয়। কম খরচে পরিচালিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রকৃতপ্রস্তাবে জাতিকে শিক্ষক স্বল্পতার রোগে ভুগতে দিয়ে বিশ্বের অন্য জাতি থেকে পিছিয়ে রাখারই নামান্তর। জাতিকে শিক্ষায় দুর্বল করে রেখে এভাবে চলতে থাকার কারণে, ইতোমধ্যেই বোধ করি, দেশের ভেতরের প্রতিষ্ঠানগুলো মেধাশূন্যতা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। দেশকে শিক্ষায় পিছিয়ে রেখে দেশের উন্নতি চাইলে সেটা হবে একটি অমার্জনীয় অবিমৃষ্যকারিতা।
আশা করি যথাযথ কর্তৃপক্ষ সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়সহ দেশের সকল বিদ্যালয়ের যাবতীয় সমস্যা দূরিকরণে সচেষ্ট হবেন। পুরনো কথা, ভুলে গেলে চলবে না, শিক্ষাকে উপেক্ষা করে কোনও জাতি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি আর পারবেও না।