গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে বজ্রনিরোধক যন্ত্র নিয়ে একটি লেখা ছাপা হয়েছিল। লেখাটির শিরোনাম- বজ্রপাত : তালগাছের বিকল্প বজ্র নিরোধক যন্ত্র। শিরোনামটিই একটি অদ্ভুতত্বের ইঙ্গিত করে। প্রশ্ন উঠতে পারে প্রাকৃতিক সৃষ্টি প্রাযুক্তিক সৃষ্টির বিকল্প হতে পারে কি? অর্থাৎ তালগাছের বিকল্প বজ্রনিরোধক যন্ত্র কী করে হবে? বোঝা সত্যি দুষ্কর।
বাংলা বছরের কালপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশে সাধারণত চৈত্র মাসের শুরু থেকে বজ্রপাতের শুরু হয়। বিগত বেশ ক’বছর ধরে এই বজ্রপাতের মাত্রা বেড়েছে কেবল নয়, বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের যে-কোনও সময়ের তুলনায় বিপজ্জনক হারে বেড়েছে। প্রকৃতির এই বিরূপতা চৈত্রসহ গ্রীষ্ম, বর্ষা ঋতুতে খোলা আকাশের নিচে কাজকরা মানুষজনের জন্য মারাত্মক। পত্রপত্রিকায় এই বজ্রপাতের নিরোধ নিয়ে কম লেখালেখি হয়নি। কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ সরকারকে তালগাছ রোপণের পরামর্শ দিয়েছেন এবং সে অনুসারে প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। কিন্তু এরকম প্রকল্প শতভাগ অবৈজ্ঞানিক ও প্রাযুক্তিকজ্ঞানের দ্বারা সমর্থিত নয় এবং শেষ পর্যন্ত একটি অকার্যকর প্রকল্প। এই রকম প্রকল্প বাস্তবায়নে টাকা ব্যয় করে দেশ শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু এই ক্ষতির জন্য দায়ী প্রকল্প প্রণয়নকারী বিশেষজ্ঞের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এই রকম মাথাভারি প্রশাসনকে প্রতিপালন করার কোনও সার্থকতা নেই।
আমাদের বোধগম্য নয় যে, কী করে তালগাছ বজ্র নিরোধক যন্ত্রের বিকল্প হয়ে উঠে, এবং সেটা কোনো বিশেষজ্ঞের গবেষণার ফল। কোনও একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করার আগে অবশ্য করণীয় গবেষণা করে কাজটির শতভাগ সাফল্য নিশ্চিত করা অবশ্য করণীয়। কিন্তু বজ্রনিরোধক হিসেবে তালগাছ রোপণের বিষয়ে কোন বিশেষজ্ঞ বৈজ্ঞানিক সরকারকে শতভাগ সাফল্যের নিশ্চয়তা দিয়েছেন, সরকার কি তা জানেন? সে গবেষকের গবেষণালব্ধ সন্দর্ভটি (থিসিস) কি জনসমক্ষে প্রকাশ করা যাবে? নাকি প্রশাসনিক কোনও কর্মকর্তা বা কর্মচারি তাঁর টেবিলে বসে একটি প্রকল্প তৈরি করলেন আর সেটিই বাস্তবায়িত করা শুরু হয়ে গেলো? প্রকল্প যদি থাকে গবেষণা থেকে বিচ্ছিন্ন, তবে দেশও থাকবে উন্নয়ন থেকে দূরে। সরকারকে এই কথা বুঝতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে গবেষক না হয়েও যাঁরা গবেষক হয়ে উঠেন এই অপরিণামদর্শীদের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা সরকারের পক্ষ থেকে থাকতে হবে।