দেশে চাকরির কোটাসংস্কার নিয়ে তোলপাড় চলছে। একজন সাহিত্যিক কোটা সংস্কার নিয়ে উপসম্পাদকীয় লিখেছেন। তাতে তিনি তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছেন। তিনি কোটা পদ্ধতির বিলোপ নয় বরং সংস্কারের পক্ষপাতী। সকল প্রকার (নারী, মুক্তিযোদ্ধা, জেলা, উপজাতি) কোটা থাকতে হবে। তাঁর মতে ‘দেশের পশ্চাৎপদ অংশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া আমাদের সাংবিধানিক অঙ্গীকার’। তিনি মনে করেন, বৈষম্য দূর করার জন্য বৈষম্যের প্রয়োগ অপরিহার্য। অর্থাৎ কোটা বৈষম্য সমাজে বৈষম্য দূরীকরণে একটি ইতিবাচক প্রকরণ। এদিকে দেশজুড়ে ছাত্ররা কোটা বিলোপের নয় কোটা সংস্কারের আন্দোলনে সক্রিয় আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সে আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় কেউ কেউ মনে করেন, কোটা সংস্কারের মতো যে-কোনও আন্দোলন প্রকৃতপ্রস্তাবে শেষ পর্যন্ত অনিবার্যভাবেই ব্যর্থতায় কিংবা অর্থহীনতায় পর্যবশিত হবে। অর্থাৎ এসব আন্দোলন ছাগলের তৃতীয় বাচ্চার লম্ফঝম্ফের মতোই অনেকটা। কিংবা হতে পারে রাজনীতির মাঠকে কৃত্রিম উপায়ে সরগরম করার বিশেষ কার্যক্রম অথবা একধরনের রাজনীতিক উসকানি। সুবোধ ছাত্রসমাজ নিজের অজান্তেই এখানে কোনও না কোন বিশেষ রাজনীতিক দল/মহল বিশেষের স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্র। ছাত্র সমাজকে বুঝতে হবে, এটা পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল নয় এটা স্বাধীন বাংলাদেশ। এখানে কোটা পদ্ধতির কোনও সার্থকতা নেই। মুক্তিযোদ্ধার কোটায় এখানে রাজাকারের চাকরি পাওয়ার উদাহরণ দুর্লক্ষ্য নয়। কিংবা নোয়াখালির লোক অনায়াসে সুনামগঞ্জের জন্মসনদ জোগাড় করে ফেলে সুনামগঞ্জের জেলা কোটায় চাকরি বাগিয়ে নিচ্ছে। এসব এখন ডালভাত মাত্র। কোনও বিশেষ শ্রেণি, স্তর কিংবা বর্গের মানুষদেরকে চাকরি দিতে হলে ক্ষমতাসীন রাজনীতির সদিচ্ছাই যথেষ্ট এবং রাজনীতিক ক্ষমতাই সকল কর্মকা-ের একমাত্র নির্ণায়ক। বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস অন্তত তাই প্রমাণ করে। বিশেষ রাজনীতিক দলের ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের কোনও মুক্তিযোদ্ধার চাকরি হয়নি, তখন কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের চাকরি দেওয়ার জন্য কোনও কোটার দরকার হয়নি, বরং অমুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা করে দিয়ে অনায়াসে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এ দেশে বর্তমানে চাকরি আসলে একটি উচ্চমূল্যের পণ্যে পরিণত হয়েছে। সুতরাং কোটা পদ্ধতি একটি ক্যামোফ্লেজ সৃষ্টিকারী প্রপঞ্চ মাত্র। এটি থাকলেই কি অথবা না থাকলেই কী। হরে দরে সব সমান। সুতরাং এটি নিয়ে আন্দোলন করারও কোনও যৌক্তিকতা আছে বলে মনে হয় না।