বাংলাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলির একটি সুনির্দিষ্ট বিধি আছে। নির্ধারিত বিধি হলো : প্রথমত, যে-স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা কম সে-স্কুলের কোনও শিক্ষককে বদলি না করা। দ্বিতীয়ত, যে-স্কুলে বেশি সংখ্যক শিক্ষক আছেন সে- স্কুলের কোনও শিক্ষককে বদলি করা। তৃতীয়ত, যে-স্কুলে কম শিক্ষক আছেন সে-স্কুলে বদলি করা। চতুর্থত, যে-স্কুলে বেশি শিক্ষক আছেন সে-স্কুলে কোনও শিক্ষককে বদলি না করা। কিন্তু জানা গেছে, বাস্তবে পরিস্থিতি তার সম্পূর্ণ উল্টো। শিক্ষক বদলি করার দাপ্তরিক অধিকারি এই তথাকথিত শিক্ষক প্রতিস্থাপন পদ্ধতিকে বাড়তি টাকা উপার্জনের উত্তম উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছেন এবং ইতোমধ্যে তাঁর (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের) বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সত্য উন্মোচিত হচ্ছে যে, বদলি করার কাজে সংশ্লিষ্টজন বা সংশ্লিষ্টরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলির কর্মকা-টিকে রমরমা বদলিবাণিজ্যের উর্বর বাজার করে তোলেছেন। গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, ‘বিধি ভেঙে চলছে শিক্ষক বদলি’। সংবাদে বলা হয়েছে যে, জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে ‘নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে’ কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষকের বদলির ঘটনা ঘটেছে কেবল তাহিরপুর উপজেলায়ই। বোধ করি, একেই বলে নিয়মভঙ্গের বাংলাদেশের বিধিভঙ্গের বাংলাদেশ হয়ে আত্মপ্রকাশ করা।
নিয়মভঙ্গের ফলে প্রত্যন্ত হাওরের যে-সব স্কুলে শিক্ষক নেই সে-সব স্কুলের অনুকূলে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে না, অপরদিকে যে-সব স্কুলে বেশি সংখ্যক শিক্ষক আছেন সে-সব স্কুলের অনুকূলে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে এবং এই নিয়মভঙ্গের পেছনে অনুঘটকের ভূমিকা রাখছে বাড়তি আয়ের সুবর্ণ সুযোগ। এই বিধিভঙ্গের কারণে অপেক্ষাকৃত ধনাঢ্য শিক্ষকরা সুযোগ পাচ্ছেন পছন্দসই স্কুলে বদলি নেওয়ার ও বঞ্চিত হচ্ছেন অর্থসম্পদে অপেক্ষকৃত হীন শিক্ষক এবং প্রকারান্তরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সামগ্রিক শিক্ষাগ্রহণ কার্যক্রম। অর্থাৎ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলির কার্যক্রমে এই অন্যায় আচরণ একটি অপরাধে পর্যবশিত হয়েছে। অচিরেই এর একটি বিহিত হওয়া দরকার এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধীকে আইনের কাঠগড়ায় তোলে তার দণ্ড নিশ্চিত করাও জরুরি।