২০১৮ সালের বিশ্বকাপে ৩২টি দল অংশ নিচ্ছে। তারমধ্যে ৩১টি দলকে বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসতে হয়েছে। একমাত্র রাশিয়া স্বাগতিক দেশ হওয়ায় সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে সৌদি আরবের অবস্থান ফিফা র্যাংকিংয়ের সবচেয়ে নিচে, ৬৭তম। তার মানে সৌদি আরবের চেয়ে ভালো খেলে এমন ৩৬টি দেশ এবারের বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়নি।
কেন পায়নি? তার কারণ হল, খেলাটির বৈশ্বিক আমেজ বৃদ্ধির জন্যে ফিফা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কিছু সংখ্যক দলকে খেলার সুযোগ করে দেয়। অর্থাৎ অঞ্চলভিত্তিক কোটা আছে। যেমন, এবারের বিশ্বকাপে টঊঋঅ থেকে ১৪টি দল (জার্মানি, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, স্পেন, ইংল্যান্ড, ডেনমার্ক, ক্রোয়েশিয়া, আইসল্যান্ড, সুইডেন, সার্বিয়া ও রাশিয়া), ঈঙঘগঊইঙখ থেকে ৫টি দল (ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পেরু, উরুগুয়ে ও কলম্বিয়া), অঋঈ থেকে ৫টি দল (অস্ট্রেলিয়া, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও সৌদি আরব), ঈঅঋ থেকে ৫টি দল (তিউনেশিয়া, সেনেগাল, মরক্কো, মিশর ও নাইজেরিয়া) এবং ঈঙঘঈঅঈঅঋ থেকে ৩টি দল (মেক্সিকো, কোস্টারিকা ও পানামা) বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। অঞ্চলভিত্তিক কোটা না থাকলে এবং ফিফা’র সর্বশেষ র্যাংকিং বিবেচনা করলে এশিয়া অঞ্চল থেকে কোন দলই হয়ত এ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেত না।
২০১৪ বিশ্বকাপে খেলেছে, এমন ২০টি দল এবারের বিশ্বকাপে আছে। অধিকন্তু আইসল্যান্ড ও পানামা এবারই প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলছে। তারমধ্যে আইসল্যান্ড একটি রেকর্ডও করে ফেলেছে। বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনকারী পৃথিবীর সবচেয়ে কম জনসংখ্যার (৩.৩৭ লক্ষ) দেশ এটি। তবে আইসল্যান্ডের ফিফা র্যাংকিংও ঈর্ষনীয়, ২২তম।
এ তো গেল সুখের কথা। দুঃখের কথাও আছে। রাশিয়া বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি বোধহয় চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালির এ বিশ্বকাপে খেলতে না পারা। ইতালির বর্তমান র্যাংকিং ১৯। বাংলাদেশে ইতালির প্রচুর সমর্থক রয়েছে। ১৯৫৮ সালের পর এবার ইতালি দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপের টিকেট পেল না। বিশ্বকাপে তিন বারের রানার-আপ নেদারল্যান্ডও এ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব পেরুতে পারেনি। নেদারল্যান্ডের বর্তমান র্যাংকিং ১৭। অন্যদিকে ফিফা র্যাংকিংয়ে ৯ম স্থানে অবস্থানকারী এবং দুইবারের কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন চিলিও এ বিশ্বকাপে নেই। নেই আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ঘানা ও ক্যামেরুনও।
আসলে বিশ্বকাপ বিশ্বের সকল মানুষের খেলা বা বিনোদনের মাধ্যম হলেও মূল লড়াইটা হয় মূলত ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে। গত ২০টি বিশ্বকাপের ১১টি জিতেছে ইউরোপের দেশ, ৯টি জিতেছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ। অধিকন্তু এ দু’মহাদেশের বাইরের কোন দেশ ফাইন্যালে পর্যন্ত যেতে পারেনি। এর বাইরে বিশ্বকাপে সাফল্য বলতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ৩য় স্থান অর্জন (১৯৩০ সালে) এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ৪র্থ স্থান অর্জন (২০০২ সালে)।
উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপে খেলেছিল ১৩টি দল। পরের বিশ্বকাপ থেকে ১৬টি দল নিয়ে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হত। ১৯৮২ সাল থেকে ২৪টি দল নিয়ে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হত আর বর্তমান ফরম্যাটে (৩২ দল নিয়ে) খেলা হচ্ছে ১৯৯৮ সাল থেকে। ২০১৮ বিশ্বকাপে ৩২টি দেশ থেকে ৭৩৬ জন খেলোয়াড় রাশিয়ায় এসেছে। অর্থাৎ প্রতিটি দলে আছে ২৩ জন করে খেলোয়াড়। কিন্তু এ ফরম্যাটেও থাকছে না। ফিফা খেলাটির আরো বেশি বিশ্বায়নের পক্ষে মত দিয়েছে এবং ২০২৬ সাল থেকে (২৩তম বিশ্বকাপ থেকে) ৪৮টি দল/দেশ বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার সুযোগ পাবে।
২০১৮’র বিশ্বকাপে ৩২টি দল খেললেও চ্যাম্পিয়ন হবে একটি দলই। কিন্তু কোন দল? আমার মনে হয় জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেন, ফ্রান্স ও পর্তুগাল- এ ছয় দেশের যে কেউ বিশ্বকাপ জিততে পারে। এরমধ্যে পর্তুগাল ছাড়া অন্য দলগুলো বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছে। আবার গুরুত্বপূর্ণ তিনটে ব্যক্তিগত শিরোপাও আছে। যথা- গোল্ডেন বল, গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন গ্লাভস। দেখা যাক, ৭৩৬ খেলোয়াড়ের মধ্যে কোন তিনজন ভাগ্যবানের কপালে জুটে এই শিরোপা।
বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় পাবেন গোল্ডেন বল। এবারের বিশ্বকাপে এর অন্যতম দাবিদার হতে পারেন মেসি, রোনালদো, নেইমার, মুলার, গ্রিজমান, পগবা বা সুয়ারেজ। গোল্ডেন বুটের দৌড়েও এরা এগিয়ে থাকবেন। সাথে আরো যোগ হবে আগুয়েরো, কাভানি, সালাহ, এমবাপ্পে, জেসুস, ভেরনার ও রুদ্রিগেজের নাম। গোল্ডেন গ্লাভস পেতে পারেন নয়্যার, ডি গেয়া, কোর্তোয়া বা লরিস।
মোদ্দাকথা, ৩২ দলের ৭৩৬ জনের উপরই চোখ থাকবে বিশ^বাসীর।