ঈদ অর্থ খুশি, আনন্দ। ঈদের দিন মানে খুশির দিন, আনন্দের দিন। তাই মুসলমানেরা সারা বছর ধরে ঈদের জন্যে অপেক্ষা করে। এ দিন ধনী-দরিদ্র, গরীব-দুঃখী, শহুরে-গ্রামবাসী নির্বিশেষে সকলে খুশিতে মেতে উঠে, আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। সারা বছরের দুঃখ, কষ্ট, গ্লানি, বেদনা সব ভুলে সবাই একত্রে ঈদের খুশিতে মিলেমিশে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যায়।
আরবি ভাষায় ঈদ অর্থ ফিরে আসা। বছরে প্রতিবার এ দিনটি খুশি ও কল্যাণের সওগাত নিয়ে ফিরে আসে। আল্লাহর পক্ষ থেকে ঈদ হচ্ছে বান্দার জন্যে বিরাট আতিথেয়তা। আল্লাহ প্রতি বছর ঈদের মাধ্যমে বান্দাকে তাঁর দয়া, এহসান ও করুণা ভোগে অভ্যস্ত করে তুলেন। এ জন্যে ঈদকে আল্লাহর নিয়ামত ও জিয়াফত ভোগ করার চিরন্তন অনুষ্ঠান বলা হয়।
ঈদুল ফিতরও তাই। ফিতর শব্দের অর্খ হলো রোজা ভাঙ্গা। ফিতর থেকেইে ইফতার শব্দের উৎপত্তি। ইফতারের মাধ্যমে ঐ দিনের রোজার সমাপ্তি ঘটে। সুতরাং ঈদুল ফিতর মানে রোজা ভাঙ্গার ঈদ। এক মাস সিয়াম সাধনার পর যে দিন থেকে আর রমজানের রোজা রাখতে হয় না, সে দিনটাই ঈদুল ফিতর। তাই ঈদুল ফিতরের দিন রোজা রাখাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। রমজানের শেষে শাওয়াল মাসের প্রথম দিনে মুসলমানেরা ঈদুল ফিতরের উৎসব পালন করে থাকেন।
ঈদুল ফিতর মুসলমানদের জন্যে একটি বড় নেয়ামত। আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার দিন। যে কোন পরিশ্রমের পর রয়েছে তার পারিশ্রমিক। আর কষ্টের পরই রয়েছে আনন্দ। তেমনি রমজানের দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমানের জীবনে আসে পুরস্কারের আনন্দ, পাপ মোচনের পর আসে পুণ্য। একজন খাঁটি মুসলমানের জন্যে এটা সবচেয়ে বড় নেয়ামত।
ঈদের আগে আমরা বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে অনেক উপহার সামগ্রী পাই। নতুন জামা, সুন্দর গয়না বা মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী পেয়ে আমাদের মন খুশিতে ভরে উঠে। তেমনি ঈদের সময় অল্লাহও তাঁর বান্দাকে খুশি করতে চান। এ ঈদুল ফিতরে আল্লাহ তায়ালা তাঁর অনুগত বান্দাকে উপহার দেন। আমাদের প্রিয় রাসুল মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, ‘রমজানের সর্বশেষ রাতে আল্লাহ রোজাদারদের গুনাহ মাফ করে দেন।’ একজন ঈমানদার ব্যক্তির কাছে গুণাহ মাফের চেয়ে বড় পুরস্কার আর কিছুই হতে পারে না।
হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে রমজানের রোজা রাখে, আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেন।’ অন্য হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে তারাবির নামাজ পড়ে, আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন।’ অপর এক হাদিসে উল্লেখ আছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে নামাজ পড়ে, আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেন।’ উল্লেখ্য যে, রমজানের রোজা, তারাবি ও কদরের পরেই আসে ঈদ, ঈদুল ফিতর। তাই ঈদুল ফিতরে এ তিনটি ক্ষমাই একসাথে পাওয়া যায়। আল্লাহর পক্ষ থেকে তার বান্দার জন্যে এটাই হলো সেরা উপহার। রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে বান্দা রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তির সুসংবাদের আনন্দ লাভ করে। ঈদুল ফিতরের দিন সে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তাই ঈদ খুশির দিন, আনন্দের দিন।
আসমানে ঈদকে পুরস্কার দিবস বলা হয়। আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঐ পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। বড় পুরস্কারের জন্যে বড় গণজমায়েত দরকার। তাই ঈদুল ফিতর হচ্ছে বৃহত্তর গণজমায়েতের ব্যবস্থা। কিতাব ফাজায়েলে রামাদান-এ উল্লেখ আছে, ঈদুল ফিতরের পুরস্কার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘ঈদুল ফিতরের দিন ফেরেশতারা জমিনে নেমে আসেন এবং উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে এমনভাবে আওয়াজ দিতে থাকেন যে, মানুষ ও জিন ছাড়া আল্লাহর সকল সৃষ্টি তা শুনতে পায়। ফেরেশতারা বলেন, হে উম্মতে মোহাম্মদ! তোমরা তোমাদের দয়ালু প্রভুর উদ্দেশ্যে বের হও, তিনি আজ অতি বিরাট দান করবেন এবং বড় গুনাহ মাফ করবেন। মুসলমানেরা ঈদগাহে হাজির হলে আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, হে ফেরেশতারা! কাজ শেষে শ্রমিকের পারিশ্রমিকের ব্যাপারে তোমাদের রায় কি? জওয়াবে ফেরেশতারা বলেন, হে আমাদের মা’বুদ! শ্রমিকদেরকে তার পারিশ্রমিক দিয়ে দিন। তখন আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদেরকে সাক্ষী করে বলছি, আমি তাদের নামাজ ও রোজার সওয়াবকে আমার সন্তুষ্টি ও ক্ষমায় পরিণত করলাম। হে মোমিনগণ! তোমরা নিষ্পাপ অবস্থায় ঘরে ফিরে যাও।’
দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর যে মোমিন ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্যে ঈদগাহে গেল, সে ঘরে ফিরে এল নিষ্পাপ অবস্থায়। তার অতীতের সকল পাপ আল্লাহ মাপ করে দিলেন। এমন মহামূল্যবান উপহার পেয়ে বান্দার মন খুশিতে ভরে উঠে। এটাই ঈদের সার্থকতা।
[লেখক মোঃ শাহাদত হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, সুনামগঞ্জ।]