সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
ব্যাংকখাতের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম নিয়ে সংসদে কড়া সমালোচনা করেছেন সরকার ও বিরোধী দলীয় এমপিরা। তবে এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের স¤পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যাংকখাত নিয়ে কথা বলেন অর্থমন্ত্রণালয় স¤পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক, কাজী ফিরোজ রশিদ, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম।
আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, অনেক আলোচনা হয়েছে, অর্থমন্ত্রী সব শুনেছেন। আশা করি, তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। একই সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলবেন।
পরে অর্থমন্ত্রী সমাপনী বক্তৃতায় সংবিধান প্রণেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বরাদ্দের অতিরিক্ত খরচ করার পর তা জায়েজ করতে স¤পূরক বাজেট পাস করা হয়। সংবিধান এই ক্ষমতা দিয়েছে বলে আইন প্রণেতাদের ধন্যবাদ।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্র ও দেশের প্রয়োজনেই অতিরিক্ত ব্যয় হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন ১১ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। আমরা জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছি। বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্তহাতে জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আমরা ঋণ করে ঘি খাই না, জনগণের কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও দেশের উন্নয়নে ব্যয় করি। বাংলাদেশ যে আজ উন্নয়নের মহাসড়কে, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে- এই সার্টিফিকেট পয়সা দিয়ে কেনা যায় না। বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার কথা আজ কেউই অস্বীকার করতে পারে না, পারবেও না।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বক্তব্য তুলে ধরে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাধারণ মানুষ যখন ঋণখেলাপি হয়, তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হয়। তাদের কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে নেওয়া হয়। তাহলে যারা এই ব্যাংকের লুটের সাথে জড়িত, তাদের কেন কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে আদালতে নেওয়া হচ্ছে না? আমি এই সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অবজারভেশনকে অভিনন্দন জানাই।
তিনি বলেন, টানা ১০ বছর ধরে বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের কাছে আওয়ামী লীগ সরকারের দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছি। প্রবৃদ্ধি এখন সাড়ে ৭ ভাগেরও বেশি, মাথাপিছু আয় ১৭শ’ ডলার ছাড়িয়ে গেছে, মূল্যস্ফীতি অব্যাহতভাবে ৬ ভাগের নিচে নেমে এসেছে। বাজেটের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে।
ব্যাংকিং খাত প্রসঙ্গে ড. রাজ্জাক বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই কিছু দুষ্ট ও দুর্বৃত্ত থাকে যারা এসব করে। আমাদের দেশেরও ব্যাংকিং খাতে কিছুটা অনিয়ম হয়েছে। এতে ব্যাংকিং খাতের ওপর চাপ পড়েছে। দিনে দুপুরে যারা বেসিক ব্যাংকসহ দু’একটি ব্যাংকে অনিয়ম করেছে তারা সবাই এখন বিচারের মুখোমুখি। ব্যাংক লুটের সঙ্গে জড়িতদের কাউকেই সরকার ছাড় দিচ্ছে না। তবে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এমন অভিযোগ মোটেই সত্য নয়, বরং বাংলাদেশের অর্থনীতি সুদৃঢ় অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, প্রতিবছরই বড় বাজেট দিয়ে জনগণকে বড় স্বপ্ন দেখানো হয়। কিন্তু বছর শেষে দেখা যায় বাজেট বাস্তবায়ন হয়নি। গত ১০ বছরে একটি বাজেটও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। ব্যাংকখাতকে পরিপূর্ণ পরিবারতন্ত্রে রূপ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ, কোনো রেগুলেটরি কমিটি নেই। ১ লাখ ২৫ হাজার ঋণখেলাপি রয়েছে। কারা ঋণখেলাপি, কিসের জন্য ঋণ খেলাপি, আজ পর্যন্ত দেশবাসীকে জানানো হয়নি। তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। দেশ থেকে বিপুল অর্থ পাচার বন্ধ করা না গেলে প্রবৃদ্ধি জনগণের কোনো কাজে আসবে না।