দেশের লোকসংখ্যা বাড়ে কিন্তু দেশের সীমা বাড়ে না। এই কারণে খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তুলতে চাইলে জমিতে ফসলের উৎপাদনের হার ক্রমাগত বাড়াতে হয়। বাংলাদেশের জনসংখ্যা স্বাধীনতার সময়ে (১৯৭১) ছিল সাড়ে সাত কোটি। তখন খাদ্য ঘাটতি ছিল। এখন জনসংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণকে ছাড়িয়ে গেছে কিন্তু খাদ্য ঘাটতি নেই। এর অর্থ এই যে, ফলনকে দ্বিগুণ করাসহ, জমিকে একাধিকবার আবাদযোগ্য করা এবং আবাদযোগ্য পতিত জমিকে আবাদের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে এটা একটা অগ্রগতি অবশ্যই। তা না হলে বিদেশ থেকে নগদ টাকা খরচ করে খাদ্য আমদানি করতে হতো।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের এক সংবাদে প্রকাশ সুনামগঞ্জের পতিত জমি আবাদের আওতায় আনার প্রস্তাব উঠেছে। অর্থাৎ এখনও কীছু অনাবাদী জমি রয়ে গেছে, যদিও আবাদী জমির পরিমাণ দিন দিন কমছে সড়ক-স্থাপনা বাড়ার কারণে। প্রস্তাবটি করা হয়েছে, সিলেট অঞ্চলে শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প থেকে। উত্তম প্রস্তাব। আবাদযোগ্য জমি পতিত রাখা জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। আবাদ বৃদ্ধির জন্যে কৃষক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের চারা ও বীজ প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু সেই সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি এই চারা ও বীজ বিতরণের কোনও সুফল পাচ্ছেন না কৃষকরা। অচিরেই এই অব্যবস্থা দূর করতে হবে।
বাংলাদেশেকে কোনও কোনও দুর্মুখ সমালোচক করিতকর্মার দেশ না বলে বলেন ‘করিবকর্মা’র দেশ। অর্থাৎ এখানকার কর্মচারী-কর্মকর্তারা চাকরি করেন বলে বেতন পান, কাজ করেন বলে নয়। মনে রাখতে হবে যে, কৃষক না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। আর দেশ না বাঁচলে বেতন পাওয়ার মওকাটিও থাকবে না। কৃষককে বাঁচানোর জন্যে কৃষিক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তাদেরকে মাঠে নেমে কাজ করতে হবে। এই কাজটি করার জন্যেই তাঁরা বেতন পান। এখানে অবহেলা করলে চলবে না। এর অন্যথা হলে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত হবে না। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি অর্জনের নিশ্চয়তা এবং মাসে মাসে মোটা অঙ্কের বেতন সব কীছু অসম্ভব হয়ে উঠবে।