বাজেট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। পক্ষে বিপক্ষে ইতোমধ্যে তর্কে নেমেছেন বিদগ্ধজনেরা। বাংলাদেশের বাজেট এখন বহরে এতটাই বড় হয়েছে যে, তাকে বিরাট বলতেই হয়। বিরাট বহরের বাজেট নাকি যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার একটি দোষ থাকে। তা থাকুক বড় বাজেট জাতিকে বড় স্বপ্ন দেখাতে শেখায়, তাতে তো কোনও সন্দেহ নেই। এবাবের বাজেট যে-স্বপ্নপূরণে ব্যর্থ হয়, আগামী বাজেট সে-স্বপ্নকে পূর্ণ করার অব্যর্থ প্রকল্প প্রতিস্থাপনে ভরপুর হয়ে উঠার সম্ভবনা তৈরি করে। আর বড় বাজেটের বড় স্বপ্নের সবটা না হলেও কীছুটা যদিও বাস্তবায়িত হয় তা হলেও উন্নয়ন কীছুটা হলেও এগিয়ে থাকে।
বিএনপি ও অন্য দল বাজেট কম দেয়নি। হিসেব করলে কেবল বিএনপি’র দেওয়া বাজেটই দশটার বেশি হবে। কিন্তু বিএনপি’র বাজেট খেয়ে উন্নয়নের বদলে দেশ দুর্নীতিতে পাঁচ পাঁচ বার বিশ্বসেরা শিরোপা অর্জন করেছিল। এদিক থেকে বিবেচনায় কোন দুর্মুখ যদি বলে ফেলে সে-বাজেটগুলো উন্নতিবান্ধব নয় বরং দুর্নীতিবান্ধব ছিল, তখন তাকে কি খুব একটা দোষারূপ করা যাবে? মনে হয় না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার এই মেয়াদে আরও ৯টি বাজেট দিয়েছে এবং দেশ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অর্থবিজ্ঞানীদের বিবেচনায় মধ্যআয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। যদিও জানা কথা, এই উন্নয়ন দেশের শতকরা পাঁচজনের উন্নয়ন বলে সমালোচিত হচ্ছে। কিন্তু এও জানা কথা, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির দেশ নয়। মুক্তবাজার অর্থনীতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি দেশ। এই নিয়ন্ত্রণ থেকে দেশকে মুক্ত করার সাধ্য বিএনপি’র তো কোনও দিনই হবে না। আওয়ামী লীগ সংবিধানে পুঁথিগত অর্থে সমাজতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনলেও বিএনপি’র নিয়ন্ত্রণে পাকাপোক্ত হওয়া মুক্তবাজার অর্থনীতির কবল থেকে বেরিয়ে এসে সমাজতন্ত্র করে ফেলতে পারেনি, তা তো একটি বাস্তব সত্য। কিন্তু তা না পরলেও মুক্তবাজার অর্থনীতির শোষণে দেশকে ছিবড়ে করে ফেলার প্রবণতা থেকে বা দুর্নীতির সূচকে বিশ্বসেরার শিরোপা অর্জন থেকে মুক্ত করতে পেরেছে দেশকে। এটাই বা কম কিসে। বিশ্ব পরিসরে যেখানে বাংলাদেশের মতো দুর্বল অর্থনীতির প্রতিটি দেশ মুক্তবাজার অর্থনীতির ইঁদুরকলে পড়ে সমস্যার পাহাড়ের তলে চাপা পড়ে আছে, মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ সেখানে রোহিঙ্গাসঙ্কটের মতো একটি ভয়ংকর বিপদকে কাঁধে নিয়ে পথ চলছে এবং নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর কাজ চলমান, রোহিঙ্গাসঙ্কট ও মাদকাসক্তির কবলে পড়া বিপুল সংখ্যক অনুৎপাদনশীল, সমস্যাশঙ্কুল ও সন্ত্রাসপ্রবণ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট ঘোষণা করেছে। তাছাড়া এইসব অসম্ভবকে সম্ভব করে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধিকে ঈর্ষনীয় পর্যায়ে ধরে রাখার কৃতিত্ব তো দেখতে পেরেছে আওয়ামী লীগই। তাই কেউ যদি বলেই ফেলে আবুল মাল আব্দুল মুহিতের এই বাজেট বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখানোর বাজেট, তা হলে তা-ই সই। বাংলাদেশ আগে স্বপ্ন দেখতে চায়, বাস্তবায়ন পরে, তবে ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর সব উন্নয়নকে কবর দিয়ে জঙ্গিবাদকে আমন্ত্রণ করে নয়। বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে সে-স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্যেই। বাংলাদেশকে কেউ সমাজতন্ত্রের পথেও হাঁটতে দেবে না আবার উন্নয়নও করতে দেবে না, তা হতে পারে না।