পত্রিকাপাঠে জানা যায় যে, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ মানব উন্নয়ন শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট’ কালপর্বে পৌঁছেছে। এই সময়টা শুরু হয়েছে ২০১২ সালে এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত চলবে বলে অনুমিত। এ-সময়টাতে (যে-সময়টা পৃথিবীর প্রত্যেক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে কোনও না কোনও সময় আসে) দেশের কর্মক্ষম (১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী) জনসংখ্যা ৩০% শতাংশ থেকে বেড়ে ৭০% শতাংশে গিয়ে পৌঁছবে। বলা হচ্ছে : এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে (যাকে বলে, জনশক্তির সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে), আর্থসামাজিক বিন্যাসের নিরিখে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হয়ে উঠতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়নের এই সম্ভবনাকে প্রতিহত করার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। রোহিঙ্গাসঙ্কট মিয়ানমার থেকে রপ্তানি করা হয়ে গেছে এবং বাংলাদেশের ভেতরে মাদক পাচারের তৎপরতাকে ভয়ংকর করে তোলা হয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভেতরে বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে অগণিত মাদক তৈরির, বিশেষ করে ইয়াবা তৈরির কারখানা। এইসব কারখানা থেকে তৈরি মাদক চালান করে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশের ভেতরে। উদ্দেশ্য একটাই ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট’ অনুযায়ী কর্মক্ষম জনশক্তিকে মাদকাসক্তির ফাঁদে ফেলে সম্পূর্ণ অক্ষম, প্রকারান্তরে ধ্বংস করে দিয়ে বাংলাদেশের উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেওয়া। উন্নত দেশ হতে না পারলে আর্থনীতিকভাবে দুর্বল দেশকে শক্তিধর দেশ কর্তৃক সহজে শাসন ও শোষণ করা সম্ভব হয়। দুর্বল দেশের সম্পদ পাচার করে নিয়ে যাওয়া যায় সা¤্রাজ্যবাদী উন্নত দেশে। এই ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করতে আপাতত বাংলাদেশকে মাদকবিরোধী প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করে তোলতে হবেই যে-কোনও মূল্যে, এর কোনও বিকল্প নেই। একটি বিকল্প অবশ্য আছে, আর সেটা হলো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মাদক-উৎপাদনের কারখানাগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া এবং সেটা বাংলাদেশের পক্ষে একবারেই অসম্ভব। এদিক দিয়ে বিবেচনায় অবশিষ্ট থাকে একমাত্র বিকল্পপথ : মাদকবিরোধী অভিযান। যদিও সেটাকে তুলনা করা যাবে ময়লার উৎসকে টিকিয়ে রেখে প্রতিনিয়ত ময়লা সাফ করে যাওয়ার মতো নির্বোদ্ধিতার সঙ্গে। এই নির্বোদ্ধিতার কাজে উত্তীর্ণ হওয়াই (মাদকবিরোধী অভিযানে জয় লাভ করাই) আপাতত বুদ্ধিমানের কাজ। দেশের উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে হলে, জনসংখ্যাকে কর্মক্ষম জনশক্তিতে রূপান্তর করতেই হবে। জনশক্তিকে মাদকাসক্তির কবলে ছেড়ে দিয়ে অর্থাৎ দেশে মাদকাসক্তিকে প্রশ্রয় দিয়ে তা কীছুতেই সম্ভব নয়। কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে মাদকাসক্তি থেকে রক্ষা করে সক্ষম জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হলে বাংলাদেশকে মাদকবিরোধী প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে হাঁটতে হাঁটতে কালক্রমে বুদ্ধিমান হয়ে উঠতেই হবে। সেই সঙ্গে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে ইন্টারনেট সুবিধা। গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের এক সংবাদে বলা হয়েছে, সরকার হাওর এলাকায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মারফত ইন্টারনেট পৌঁছে দিয়ে প্রযুক্তিবৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। জানা কথা, টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে শিক্ষা ও চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, “দেশের বিভিন্ন দীপ এলাকা, হাওর, ছিটমহল, প্রত্যন্ত এলাকা ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছাতে পারলে ইন্টারনেট নির্ভর শিক্ষা দেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া টেলিমেডিসিন (দূরচিকিৎসা) সেবা চালুর মাধ্যমে মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুর হার কমানো যাবে। জটিল রোগীর চিকিৎসা গ্রামে বসেই করা সম্ভব হবে।”
সময় ও বাস্তব পরিস্থিতি সুস্থ ও সুস্থির থাকলে এসব কীছুই অনায়াসে সম্ভব। কিন্তু ইতোমধ্যে মাদক ও জঙ্গিবাদের ব্যাপক বিস্তার, আর রোহিঙ্গাসঙ্কট সৃষ্টি করে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিকে অস্থির ও অসুস্থ করে তোলা হয়েছে। সঙ্কটে ফেলা হয়েছে দেশকে। দেশের ভেতর এই সঙ্কাটাপন্ন অবস্থা বজায় থাকলে অনিবার্যভাবে আন্তর্জাতিক সা¤্রাজ্যবাদী চক্রান্ত বাস্তবায়িত হবে এবং বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মাদকাসক্ত একটি দুর্বল অর্থনীতির দেশ হিসেবে টিকে থেকে উন্নত রাষ্ট্রের বাজার হয়েই থাকবে চিরকাল। এই বিপদ কাটাতে হলে দেশকে দ্রুত ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করা ও সেই সঙ্গে মাদকমুক্ত করার কোনও বিকল্প নেই।