হাফেজ মাওলানা নাসিরুদ্দিন ::
পবিত্র রমজান মাসে মসজিদগুলো মুসুল্লিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। মুমিন-মুসলমানরাও ইবাদতের জন্য পাগলপারা হয়ে যায়। এর কারণ হলো পবিত্র মাহে রমজান হলো কোরআন নাজিলের মাস। রহমতের মাস।
আরো একটি কারণ পাওয়া যায় ‘বাইহাকী শরীফে’। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে নবী কারিম (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতকে রমজান শরিফের ব্যাপারে পাঁচটি জিনিস দান করা হয়েছে। যা আগের উম্মতকে দান করা হয় নাই। এর একটি হলো এ মাসে (রমজান) দুষ্ট ও অবাধ্য শয়তানদেরকে বন্দি করে রাখা হয়। অন্যান্য মাসে তারা যেসব খারাপ কাজ পর্যন্ত পৌঁছতে পারতো, এ মাসে সে পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। তাই রোজাদারের উচিত কিছু কিছু বিষয় বেশি বেশি করা আর কিছু কিছু বিষয় বর্জন করা। কারণ, মানুষই গোনাহ করে। তাই আসুন আমরা জেনে নিই রমজানে কোন কোন কাজগুলো বেশি করা উচিত আর কোন কোন কাজগুলো বর্জন করা উচিত।
করণীয় বিষয় :
* বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা। কোরআন তেলাওয়াত এমন একটি আমল যা সব জিকিরের চেয়ে উত্তম জিকির। দেখুন সারা বছর যত কোরআন তেলাওয়াত হয় তার চেয়ে রমজান মাসে বেশি হয়। কোরআনকে বলা হয় কালামুল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহর কথা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর কথা বার বার তেলাওয়াত করবে তার প্রতি তো আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই খুশি হবেন।
* বেশি বেশি তাহাজ্জদ নামাজ পড়া। তাহাজ্জদ তো এমন আমল যা নির্জনে নীরবে করা হয়। আর নির্জনের ইবাদত কবুল হবার প্রমাণ রয়েছে। বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। বেশি বেশি জিকির করা। বেশি বেশি তওবা করা।
বর্জনীয় বিষয় :
* দৃষ্টিকে হেফাজত করা। যেনো কোনো খারাপ কাজে দৃষ্টিপাত না হয়। বেগানা মহিলার প্রতি দৃষ্টি না পড়ে। এমনিভাবে কোনো নাজায়েজ কাজের দিকেও যেনো দৃষ্টি না পড়ে। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, দৃষ্টি ইবলিসের তীরগুলোর মধ্যে একটি। যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার ভয়ে এটা হতে বেঁচে চলবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন ঈমানী নূর দান করবেন যার মিষ্টতা ও স্বাদ সে তার দিলের মধ্যে অনুভব করবে।
* জবানকে হেফাজত করা। মিথ্যা, পরনিন্দাকারী, বেহুদা কথাবার্তা, গীবত, অশ্লীল কথাবার্তা, ঝগড়া-বিবাদ ইত্যাদি সবকিছুই এগুলোর অন্তর্ভুক্ত। বুখারী শরীফে বলা হয়েছে, রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ। তাই রোজাদারের উচিত তিনি যেনো তার জবান দ্বারা কোনো অশ্লীল বা মূর্খতার কথা-বার্তা, ঠাট্টা-বিদ্রƒপ প্রভৃতি না করেন। যদি কেউ ঝগড়া করতে আসে, তবে তাকে বলে দেবেন যে তিনি রোজাদার।
* গীবত থেকে বেঁচে থাকা। এজন্য অবশ্য আমাদের জানতে হবে গীবত কাকে বলে। নবী কারিম (সা.)-কে কেউ একজন জিজ্ঞাসা করলো যে গীবত কি জিনিস? তিনি বললেন গীবত হলো কারো পেছনে এমন কথা বলা যা তার কাছে অপছন্দনীয়। লোকটি জিজ্ঞাসা করলেন, যা বলা হলো তা যদি বাস্তব হয় তবে কি হবে? নবী কারিম (সা.) বললেন তবুও গীবত হবে। আর যদি বিষয়টি তার মধ্যে না থাকে তবে তা হবে মিথ্যা অপবাদ।
বর্তমান সমাজে গীবতটা খুবই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। মানুষ দু-চারজন একসঙ্গে হলেই গীবত শুরু হয়ে যায়।
* কানের হেফাজত করা। প্রত্যেক অপ্রিয় বিষয় যা মুখ বা জবান থেকে বের করা নাজায়েজ, তা শোনাও নাজায়েজ। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, গীবতকারী ও গীবত শ্রবণকারী উভয় গোনাহের অংশীদার হয়।
* শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হেফাজত করা। যেমন হাতকে নাজায়েজ বস্তু ধরা হতে, নাজায়েজ বস্তুর দিকে যাওয়া থেকে বিরত রাখা। ইফতারের সময় পেটকে সন্দেহযুক্ত খাবার থেকে বিরত রাখা।
যে ব্যক্তি রোজা রেখে হারাম মাল দিয়ে ইফতার করে, তার অবস্থা ওই ব্যক্তির মতো যে কোনো রোগের জন্য ওষুধ ব্যবহার করে, কিন্তু তার সঙ্গে সামান্য বিষও মিশিয়ে নেয়। ফলে ওষুধ তার রোগের জন্য উপকারী হলেও পাশাপাশি বিষ তাকে ধ্বংস করে দেবে।
আসুন আমরা সবাই পবিত্র মাহে রমজান মাসে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করে চলার চেষ্টা করি এবং ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল, মুস্তাহাব আদায় করে আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করি। নিজের গোনাহকে মাফ করাই। নিজের চরিত্রে পরিবর্তন আনি। তাহলেই সার্থক হবো আমরা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রোজার পরিপূর্ণ হক আদায় করে রোজা রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন।