সুখেন্দু সেন ::
‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল’ — না, ফুটবলের সে সোনালী দিন আর নেই। বাংলায় ফুটবল তেমন এগোতে পারেনি, জনপ্রিয়তায় ভাটার টান অনেক দিন থেকেই। দেশীয় ফুটবল, স্থানীয় ফুটবল এখন আর জনচিত্ত মাতিয়ে রাখেনা। কেমন যেন কাঠপেন্সিলে আঁকা ধূসর ছবি। তবুও বিশ্বকাপ এলে কোথা থেকে যেনো থরথর ফুটবল আবেগ বন্যাবেগে ভাসিয়ে দেয় শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ, পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজার। বিশ্বমানের ধারেকাছে না থাকলেও হুজুগে বাঙালি ফুটবল প্রেমে ভাসে। ভাসে একটু বেশী মাত্রাতেই। ভিন্ন মেরুর ব্রাজিল, আর্জেটিনা ঘরে ঘরে ঘাঁটি গাড়ে। বিশ্বকাপ শুরুর বেশ কয়দিন বাকি থাকলেও জয়-পরাজয়ের হিসেব-নিকেশে, সমর্থকদের তর্ক-বিতর্ক, উল্লাস-উচ্ছ্বাসে, প্রস্তুতি আয়োজনে বুঝা যায় এ যেন আমাদের ঘরের মাঠের খেলা আর শুরু হয়ে গেছে তুমুলভাবে। মেসি, নেইমার, রোনালদো সেতো ঘরেরই ছেলে। কত আপন, কত প্রিয়জন। এমন কি নিজ দলের নিশ্চিত জয়ের আনন্দ খেলা শুরুর আগেই উপভোগ করে নিতে কারো কোন কার্পণ্য নেই। কত উদার আমাদের মন। ভিন দেশের জয়ানন্দ আমরা কতটা নিজের করে নিতে পারি। এমন হতেই পারে। পৃথিবী নামক এ গ্রহের সবচেয়ে জমকালো, উত্তেজনাপূর্ণ ইভেন্ট বিশ্বকাপ ফুটবল। জনপ্রিয়তায়ও শীর্ষে। প্রতিটি মহাদেশের অংশগ্রহণ এতে। এর ঢেউতো পৃথিবীর কোণায় কোণায় ছড়িয়ে পড়বেই। সে আনন্দের ভাগ আমরা একটু বেশি নিতে পারলে তাতে ক্ষতির কোন কারণ নেই।
বাঙালি হুজুগে, এমন বদনাম থাকলেও এরা উৎসব প্রিয়, এমন সুনামও রয়েছে। সবকিছুতে একটা উৎসবীয় আমেজ না আনলে মন ঠিক ভরে না। বাজারে বাজারে ঈদের পোষাকের পাশাপাশি এসেছে বিভিন্ন দলের রঙ-বেরঙের জার্সি। গঠিত হচ্ছে সমর্থক গোষ্ঠী। ফেসবুক প্রোফাইলও বদলে যাচ্ছে সমর্থন অনুযায়ী। প্রতিপক্ষের প্রতি আক্রমণ, তীর্যক বাক্যবাণের ছোটাছুটি দূরাভাষের এ মাধ্যমজুড়ে। পতাকাও তৈরি হচ্ছে। তা উড়বে যত্রতত্র। বহুতল দালান চূড়া থেকে কুঁড়েঘরে, বাসার ছাদে, গাছে গাছে, পথে পথে। গাড়িঘোড়া, নৌযানে। থাকবে সমর্থকদের মিছিলে। টিভি দেখার জমায়েতে।-এখানেই কিছুটা আপত্তি বৈকি। একটি স্বাধীন দেশের সার্বভৌম সীমানায় অন্য একটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকা কিভাবে প্রদর্শন করা হবে তার কি কোন নীতিমালা আছে। যার যখন ইচ্ছা সেকি যে কোন দেশের জাতীয় পতাকা এ দেশের মাটিতে উড়ানোর অধিকার রাখে। স্বস্ব দেশের জাতীয় পতাকা নিয়েই এক একটি দেশ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে। এটি কোন দেশের জাতীয় ফুটবল দলের পতাকা নয়। কাজেই লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম দেশে ভিন দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন কতটুকু যুক্তিসংগত বা আইনসংগত। এবিষয়ে কোন আইন বা নীতিমালা যদি থেকে থাকে তবে কর্তৃপক্ষের তা জনগণকে অবহিত করা উচিত। আমরাও যারা সমর্থক তাদেরও বিষয়টি সচেতনভাবে বিবেচনায় রাখা উচিত যে ফুটবলকে ভালবেসে, প্রিয় খেলোয়াড়ের প্রতি অনুরাগে, একটি দলকে সমর্থন দিতে গিয়ে আমরা যেনো নিজ দেশের অসম্মান না করি, নিজদেশের অমর্যাদা না করি। ভিনদেশের পতাকা উত্তোলন বা প্রদর্শনের পূর্বে যেনো নিয়ম-নীতিগুলো জেনে নেই।