1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৭ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

কৃত্রিম বাঁধ ও কানাইখালী খনন না হওয়ায় পতিত ছিল ডালার হাওর : ১৫ গ্রামে ফসল তোলার আনন্দ নেই

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২২ মে, ২০১৮

শামস শামীম, পাগনার হাওর ঘুরে এসে ::
দীর্ঘ এক দশক পরে হাওরে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। সম্পূর্ণ বোরো ফসল গোলায় তুলতে পেরে গেলবারের ফসলহারা কৃষকের চোখে মুখে আনন্দ ঝিলিক। কিন্তু ফসল তোলার আনন্দ নেই জামালগঞ্জের পাগনার হাওরের ডালার হাওরের ৯ মৌজার ১৫ গ্রামের কৃষকের মনে। জলাবদ্ধতার কারণে তারা এবার হাওরের প্রায় ৩ হাজার একর জমি চাষ করতে পারেননি। মওসুমের শুরুতে পানিসম্পদমন্ত্রী এলাকায় এসে জলাবদ্ধতা নিরসনের আশ্বাস দিয়ে গেলেও কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় জমিগুলো পতিত রয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানিয়েছেন কানাইখালি খাল খনন না হওয়া এবং লক্ষ্মীপুর ও ফেনারবাঁকের মাইশাকুড়ি খালে কৃত্রিম বাঁধ দেওয়ায় ডালার হাওরের সমস্যাকে স্থায়ী করা হয়েছে। আপাতত ভুতিয়ারপুরে একটি ছোট নালা তৈরি করে দিলে এই সমস্যার সহজ সমাধান হবে বলে মনে করেন ৯ মৌজার কৃষকরা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জামালগঞ্জ ও দিরাই উপজেলা বেষ্টিত জেলার বৃহত্তম পাগনার হাওরটির অংশবিশেষ হলো জামালগঞ্জের ফেনারবাক ও ভীমখালী ইউনিয়নের মধ্যবর্তী ডালার হাওর। সম্পূর্ণ পাগনা ও মিনি পাগনা মিলিয়ে হাওরটিতে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর আবাদী জমি রয়েছে। এই হাওরেই অন্তর্ভুক্ত ডালার হাওর। দেখতে গোল ডালার মতো স্থানীয়রা নাম দিয়েছেন ‘ডালার হাওর’। এই হাওরে প্রায় ৩ হাজার একর বোরো জমি রয়েছে। নয়মৌজা খ্যাত দৌলতপুর, ভাটি দৌলতপুর, বিনাজুড়া, ছয়হারা, মাতারগাঁও, তেঘরিয়া, গঙ্গাধরপুর, কুছারগাঁও, রাজাপুর, কামারগাঁও, রাজারবাজ, ভা-া, মাখরখলা, মল্লিকপুরসহ অন্তত ১৫টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক এই হাওরে চাষাবাদ করেন। প্রায় এক দশক আগ থেকে হাওরের পার্শ্ববর্তী কানাইখালি নদী খনন হওয়ায় এবং ওই সময়ে ওই হাওরের ভাটিতে লক্ষ্মীপুর এবং ফেনারবাকের মাইশাকুড়ি খালে প্রভাবশালীরা কৃত্রিম বাঁধ দেওয়ায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া ভুতিয়ারপরে প্রাকৃতিক যে ছোট নালা ছিল তাও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন এই ১৫ গ্রামের হাজারো কৃষক। ফলে বোরো মওসুমের শুরুতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা জানান, অন্যান্য বছর তারা সেচ দিয়ে কমবেশি ধান চাষাবাদ করতে পারলেও এবছর তারা সেই সুযোগও পাননি। ফলে পুরো হাওরই পতিত থাকে।
কৃষক ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জানান, মওসুমের শুরুতে এই হাওরের রাজাবাজ এলাকায় এসে হাওরটি পরিদর্শন করেন তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এসময় কৃষকার কানাইখালী নদী খনন এবং লক্ষ্মীপুর ও মাইশাকুড়ি খালের কৃত্রিম বাঁধের কারণে ডালার হাওর সম্পূর্ণ পতিত থাকছে বলে মন্ত্রীকে অবগত করেন। তিনি এ বিষয়ে দ্রুত সমাধান নিয়ে হাওরটি চাষবাসের উপযুক্ত করা হবে বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু মওসুম চলে যাওয়ায় হাওরের পানি বেরুতে না পারায় কৃষকরা ধান চাষ করতে পারেন নি। ফলে এবার বাম্পার ফলনের বছরেও ফসল ফলানো থেকে বঞ্চিত হন কৃষক। কৃষকরা বিভিন্ন সময়ে কানাইখালি নদী খননের নামে বিএডিসি এবং এলজিইডি’র হিলিপ প্রকল্প থেকে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা খনন না করে লুটপাট হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন। এদিকে ডালার হাওরের পাশাপাশি পাগনার হাওরের উত্তরপূর্বের অংশ কোরাইল্যা হাওরেও এবার প্রায় ৫০ একর জমি চাষ করতে পারেননি কৃষকরা।
শনিবার সরেজমিন ডালার হাওরে গিয়ে দেখা যায় চাষ করতে না পারা জমিতে ঘাস জন্মেছে। সবুজ ঘাসে ছেয়ে গেছে হাওরটি। আশ-পাশের গ্রামের কৃষকরা হাওরের দিকে বিষাদগ্রস্ত মন নিয়ে চেয়ে দেখছেন। পাগনার হাওরেরই লক্ষ্মীপুর, ফেনারবাঁকসহ বিভিন্ন অংশে দেখা গেল ধান তোলার উৎসব। সম্পূর্ণ ধান কাটার পর কৃষক কিষাণীরা সেই সোনার ধান শুকাচ্ছেন খলায়। কৃষকদের কেউ কেউ গবাদিপশুর জন্য খড় সংগ্রহ করছেন। কিন্তু পাশের গ্রামগুলোতে ভিন্ন চিত্র লক্ষ করা গেল।
জানা গেছে, এই হাওরটিতে প্রায় ১১ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়ে থাকে। এই ধানের বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকার উপরে। এ বছর চাষ না হওয়ায় বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক।
ছয়হারা গ্রামের কৃষক হরেকৃষ্ণ তালুকদার বলেন, আমি ৩ আল (১ হাজার ৮০ শতক) জমিন এক্কেবারেই রইতাম হারছিনা। আজকু সাত আট বছর ধরি আমরার এই সমস্যা, খেত রইতাম হারিনা। ইবারও ডালার আউরো খেউ জমিন রইতে হারছেনা।’ একই গ্রামের কৃষক রণদা প্রাসাদ বলেন, প্রায় ৮ শ হাল জমি রয়েছে আমাদের ডালার হাওরে। দুটি ইউনিয়নের ১৪-১৫টি গ্রামের কৃষকদের একমাত্র অবলম্বন এই হাওরটি। আমরা কয়েক বছর ধরে পুরো হাওরে চাষ করতে পারিনা। হাওরের পানি নিষ্কাশনের সব পথ কৃত্রিমভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এবার পুরো হাওরই পতিত রয়ে গেছে। দীর্ঘদিনের এই সমস্যার কারণে ছোট ছোট কৃষি পরিবারগুলো এলাকা ছেড়ে অন্যত্র শ্রমজীবী হিসেবে চলে গেছে।
কামারগাঁও গ্রামের কৃষক স্বাধীন তালুকদার বলেন, আমাদের দেড় হাল জমি সম্পূর্ণ পতিত রয়ে গেছে। ধান চাষ করতে পারেনি। তিনি আফসোস করে বলেন, জানিনা আর এমন ভালো বছর পাব কি না। এবার যদি কোনভাবে ধান লাগাতে পারতাম তাহলে কৃষক অনেক উপকৃত হতেন। আমরা এবার আশ-পাশের কৃষকদের ধান তোলার উৎসব শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছি। আমাদের এলাকার ১৪-১৫ গ্রামের কৃষকের মধ্যে এবার বৈশাখের আনন্দ নেই।
ছয়হারা গ্রামের সন্তান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারি পরিচালক সজল তালুকদার বলেন, লক্ষ্মীপুরের খাল এবং মাইশাকুড়ি খালে কৃত্রিমভাবে বাঁধ দিয়ে ডালার হাওরে স্থায়ী এই জলাবদ্ধতা তৈরি করা হয়েছে। এর পিছনে একটি প্রভাবশালী চক্র কাজ করছে। যারা ডালার হাওরের অসহায় কৃষকদের জিম্মি করে কম দামে হাওরের সকল জমি কিনতে চায়।
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আল ইমরান বলেন, মওসুমের শুরুতে আমরা এই হাওরটির পানি নিষ্কাশনের জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের বলেছিলাম। আমরা মন্ত্রী মহোদয়কেও নিয়ে এসেছিলাম। কৃষকরা তাদের বঞ্চনার কথা উনাকে জানিয়েছিলেন। আমিও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংগুলোতে এই বিষয়টি অবগত করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এবছর তারা ডালার হাওরে চাষ করতে পারেননি। তবে এবার অন্যত্র বাম্পার ফলন হয়েছে জানিয়ে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে এই কয়েকটি গ্রামের কৃষকদের বাঁচাতে ডালার হাওরের এই সমস্যার সমধান করা উচিত।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com