মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী ::
ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ‘লিচুর গ্রাম’ মানিকপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর ইউনিয়নের লামাসানিয়া, পরশ্বেরীপুর, বীরসিংহ, সুরমা ইউনিয়নের টেংরাটিলা আলীপুরে ডালে ডালে রসালো লিচুর সমাহার। এবছর ভালো ফলন হওয়ায় চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। লাভজনক লিচু চাষে নিজেদের সম্পৃক্ত করে ওইসব এলাকার অন্তত শতাধিক চাষি এখন সাবলম্বী।
দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের বালিউরা বাজার থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে ছাতকের নোয়ারাই ইউনিয়নের চৌমোহনী বাজার। গ্রামীণ মেঠোপথ ধরে একটু এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে মানিকপুর ও লামাসানিয়া গ্রাম। সেখানে প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় ছোট বড় লিচু বাগান রয়েছে। প্রতিটি লিচু গাছে এখন শোভা পাচ্ছে দেশী জাতের রসালো লিচু।
স্থানীয় লিচু চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে গৌরীপুরের জমিদার হরিপদ রায় চৌধুরী ও তার ভাই শান্তি পদ রায় চৌধুরীর কাচারী বাড়ি ছিল মানিকপুর গ্রামে। জমিদারের লোকজন পরীক্ষামূলকভাবে ৩০টি লিচু গাছ সেখানে রোপণ করেন। বর্তমানে শতবর্ষী এসব লিচু গাছ এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এরই ধারাবাহিকতায় নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুরসহ ৮টি গ্রাম ও ইসলামপুর ইউনিয়নের হাদা-চানপুর ও কুমারদানি গ্রামে নওসাদ মিয়ার বাগান বাড়িতে এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার টেংরাটিলা, লামাসানিয়া, লাস্তবেরগাঁওয়ে লিচু বাগান গড়ে ওঠে।
জানা গেছে, প্রতি বছর ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার লিচু চাষীরা অন্তত কোটি টাকার লিচু বিক্রি করে থাকেন। বর্তমানে প্রতিটি গ্রামের নারী-পুরুষ সবাই লিচু বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছে। এমন কোন বাড়ি নেই যার আঙিনায় ৪/৫টি লিচু গাছ নেই। বাগান ভেদে ২৫/৩০ হাজার থেকে ২ লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে চাষীরা জানিয়েছেন। এদিকে লিচু বাগানগুলোতে বাদুরের উপদ্রব ঠেকাতে ইতিমধ্যে সরকারিভাবে সোলার সিস্টেম প্রদান করা হয়েছে।
কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে স্থানীয় লিচু চাষী শুকুর আলী, আব্দুর রহিম, হারুনুর রশীদ, জামাল উদ্দিন, সাইদুর রহমান, ডা. ওসমান গণি, রুস্তম আলী, কেরামত আলী, আরব আলী, সুন্দর আলী, জয়নাল আবেদীন, মতিউর রহমান, বাদশা মিয়া, ফুল মিয়া, সিদ্দিক মিয়া, মাসুক মিয়া, মো. আব্দুল্লাহ, মজলু মিয়া, মানিক মিয়া, জয়নাল আবেদীন, আব্দুল হান্নান, জজ মিয়া, নাজির হোসেন, নিজাম উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মহররম আলী, মিলন মিয়া, স্বপন মিয়া, আকাশ মিয়া, ফারুক আহমদ, জসিম উদ্দিন, কাজী নিজাম উদ্দিন, হোসেন মিয়া, আলী আহমদ, কুদ্দুছ মিয়াসহ অসংখ্য চাষী লিচু চাষে এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন।
জানাগেছে, বর্তমানে বাজারে প্রতি হাজার লিচু ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইতিমধ্যে মানিকপুরের লিচু চাষী মানিক মিয়া ও মানিকপুর জামে মসজিদের লিচুর বাগান প্রায় দুই লাখ টাকায় নিলাম হয়েছে। এখানকার চাষীরা বলেছেন এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় ফলন তেমন ভালো হয়নি। তাই চাষীরাও তেম দাম পাচ্ছেন না। তবে পার্শ্ববর্তী দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর ইউনিয়নের লামাসানিয়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে দোয়ারাবাজার উপজেলার প্রত্যেক লিচু চাষীরা অভিযোগ করে বলেছেন, মানিকপুরে লিচুর বাগানগুলোতে সরকারিভাবে সোলার প্যানেল প্রদান করা হলেও লামাসানিয়া ও আশপাশের লিচু চাষীদের পাখি ও বাদুরের উপদ্রব ঠেকাতে সোলারপ্যানেল প্রদান করা হয়নি। পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় চাষীরা রাত দিন কঠোর পরিশ্রম করেও বাদুরের উপদ্রব ঠেকাতে পারছেন না।