সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
শিশুদের অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে ঠেলে না দিয়ে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে দিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, “অভিভাবকদের প্রতি আমার আহ্বান, আপনারা শিশুর ব্যক্তিত্বের প্রতি আস্থা রেখে তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিন। শিশুদের অশুভ ও অসম প্রতিযোগিতার মুখে ঠেলে দেবেন না।”
মঙ্গলবার রাজধানীতে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি অভিভাবকদের উদ্দেশে আরও বলেন, “সব কিছুতে প্রথম বানানোর জন্য শিশুদের জন্য এমন কিছু করবেন না যা নীতি-নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বা তারা ভুল পথে পরিচালিত হতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি শিশুকে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ স¤পর্কে সচেতন করে তুলুন, যাতে বড় হয়ে তারা কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতা থেকে মুক্ত থাকতে পারে। এজন্য পরিবার, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাই আসুন শিশুদের প্রতিভা বিকাশে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাই। আমি অভিভাবক, সামর্থ্যবান ব্যক্তি এবং শিশু কল্যাণে নিবেদিত সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি শিশুবান্ধব কর্মসূচি নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
এখনকার শিশুদের জীবনের শুরুতেই লেখাপড়া নিয়ে চরম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, “এ প্রতিযোগিতায় শিশুদের চেয়ে তাদের মা-বাবা ও অভিভাবকদের আগ্রহই বেশি দেখা যায়। শিশুদের ধারণক্ষমতা চিন্তা না করে কে কয়জন টিউটরের কাছে পড়ছে বা কে কত বেশি নম্বর পেল সেটাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। এতে শিশুদের স্বাভাবিক বেড়ে উঠা বাধাগ্রস্ত হয়।”
তিনি বলেন, “আমাদের মনে রাখা দরকার, পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার চেয়ে ভালো মানুষ হওয়ার গুরুত্ব অনেক বেশি। শিশুদের শেখাতে হবে আনন্দের মাধ্যমে। জোর করে বা চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নয়। বদ্ধঘরের চার দেয়ালের বাইরে যে বিশাল জগত রয়েছে তা থেকে শিশুকে শেখাতে হবে। ছবির প্রজাপতির চেয়ে উড়ন্ত প্রজাপতির রং ও সৌন্দর্য যে অনেক সুন্দর তা শিশুকে জানাতে হবে। তা হলে সেই শিক্ষা শিশুর মনে স্থায়ী হবে। তারা আত্মপ্রত্যয়ী হতে পারবে।
প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের সমাজের মূলধারায় স¤পৃক্ত করার তাগিদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি শিশুদের উদ্দেশে বলেন, তারাও সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের বোঝা হিসেবে না ভেবে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের মানসিক বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। তাদের মানবস¤পদে পরিণত করতে তোমাদের সহযোগিতা করতে হবে, তাদের বন্ধু করে নিতে হবে। শুধু আইন ও সনদ দিয়ে শিশুদের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের মানসিকতারও পরিবর্তন প্রয়োজন।
এর আগে রাষ্ট্রপতি জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগতিা ২০১৮ তে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
শিশু একাডেমি মিলনায়তনে ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক সচিব নাছিমা বেগম, শিশু একাডেমির পরিচালক আনজীল লিটন। পরে শিশুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন রাষ্ট্রপতি।