সরকারিভাবে হাওরাঞ্চলের কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় এখনো শুরু হয়নি। এই বিষয় নিয়ে চলতি মাসের শুরু থেকেই বিশেষ করে স্থানীয় পত্রপত্রিকায় ক্রমাগত লেখালেখি হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত অবিলম্বে ধান ক্রয় শুরু করার জন্য তাগাদা প্রদান ও দাবি জানানো হচ্ছে। বিশেষ করে এবার হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের পক্ষ থেকে তো বিশেষভাবে হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন বিষয়সহ ধান ক্রয়ের এই বিষয়টি নিয়ে অগ্রিম সতর্কতা জানিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কীছুই হয়নি বলে মনে হচ্ছে। নির্দিষ্ট করে দেওয়া চালকলের কাছে চাল বিক্রি করার ব্যবস্থা আগেভাগেই, বলা যায় অনেকটা তড়িঘড়ি করে, চালু করা হলেও এখনও পর্যন্ত ধান বিক্রি চালু করার কোনও ব্যবস্থা হয়ে উঠেনি, বরং উত্তরোত্তর পিছিয়ে পড়ছে। এ দিকে সরকারি গুদামে ধান ক্রয়ের ব্যবস্থা চালু না হওয়ার বিষয়টি হাওরাঞ্চলের কৃষকদের অভাব-অনটনের জীবনে একধরনের সঙ্কট তৈরি করেছে এবং এই অবসরে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা কম দামে কৃষকের ধান ক্রয়ের সুবিধা গ্রহণ করে মোটা অঙ্কের টাকা পকেটস্থ করার কাজে তৎপর আছে। এই বিষয় নিয়ে গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম, “সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের বরাদ্দ আসেনি এখনো”।
হাওরাঞ্চলে বোরো ফসল কাটা থেকে শুরু করে শেষ হওয়া ও তারপর বড়জোর সপ্তাহ দিনের মধ্যে বিভিন্ন সাংসারিক কেনাকাটার প্রয়োজনে কৃষকরা ধান বিক্রয় করে থাকেন। এই কারণে কৃষকরা যাতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ধানকাটা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, অর্থাৎ অনতিবিলম্বে, সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের নিয়ম চালু করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবছরই সরকারি এই কর্মসূচিকে বিভিন্ন কৌশলে ব্যর্থতায় পর্যবশিত করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত কৃষকরা লাভবান না হয়ে প্রকারান্তরে মধ্যস্বত্তভোগীরাই লাভবান হয়। কৃষকবান্ধব একটি সরকারি কর্মসূচিকে বিলম্বে শুরুর ফাঁকতালে ফেলে ব্যর্থ করে দিয়ে কৃষকদের দুর্দশা বাড়নোর কোনও মানে হতে পারে না। তাছাড়া ভুলে গেলে চলবে না যে, কৃষককে দুর্দশায় ফেলে কায়দা করে তার কষ্টে ফলানো ফসল কম দামে ক্রয় করার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা কৃষকদের প্রতি একটি অমানবিক আর্থনীতিক আচরণ হিসেবে গণ্য হওয়ার যোগ্য।
আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বিষয়টি অবিলম্বে সুরাহা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, এবং সরকারের কৃষকবান্ধব কর্মসূচিকে সফল করে তোলার জন্য তৎপরতা বৃদ্ধি করা হবে।