ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদর্শের রাজনীতির কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আদর্শহীন রাজনীতি কোনও রাজনীতি নয়। আদর্শ নিয়ে এগিয়ে গেলে অবশ্যই তাতে দেশের মানুষের কল্যাণ হবে।’ বর্তমান বিশ্বে যে-কোনও দেশে যে-কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের কণ্ঠে এমন আদর্শের ফুলঝুরি ঝরতেই পারে এবং চারদিকে আদর্শহীনতার রাজনীতির প্রাবল্যের পরিসরে এমনটাই নিতান্ত স্বাভাবিক। কিন্তু শেখ হাসিনা যখন আদর্শিক রাজনীতির কথা বলেন, তখন তা নিছক কথার কথা থাকে না, বরং তা বাংলাদেশের সকল মানুষের রাজনীতিক জীবনের আদর্শিক অভিব্যক্তি হয়ে উঠে। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তাঁর এই অনন্য পরিচয়ের সঙ্গে যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পরিচয়টি যুক্ত হয় তখন এই রাষ্ট্রপ্রধানের এমনতর পরিচিতির একটি আলাদা তাৎপর্য এমনিতেই দাঁড়িয়ে যায়, কল্পনা করে নিতে হয় না।
সব রাষ্ট্রপ্রধানের কথা সমান নয়। বাংলাদেশে এমন রাষ্ট্রপ্রধানকে আমরা পেয়েছি যিনি ঘোঘণা দিয়ে রাজনীতিকে ‘প্রব্লেম্যাটিক করে তোলেন। কেউ বা বলেন, রাজনীতিতে কোনও শেষ কথা নেই। এই ধরনের ‘প্রব্লেম্যাটিক’ রাষ্ট্রনায়করা অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় এসে দেশের ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রটিকে অবক্ষয়ের চূড়ান্তে নিয়ে গেছেন। একজন মাহমুদুর রহমান মান্না হঠাৎ করেই বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার স্বপ্ন দেখেন, চাকরির কোটা সংস্কারের ছাত্র-আন্দোলনের ফাঁকে উপাচার্যের বাসভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। আর ছাত্রলীগের উদ্বোধনী সম্মেলনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নতুন করে পুরাতন কথা উচ্চারণ করতে হয়। গলা উঁচিয়ে বলতে হয়, ‘আদর্শহীন রাজনীতি কোনও রাজনীতি নয়।’
মনে রাখতে হবে, এই আদর্শহীন রাজনীতির শুরু হয়েছিল, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুন করে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ক্ষমতায় ফিরতে হয়েছে। তিনি যখন আদর্শের কথা বলেন তখন তাঁর বলা রাজনীতিক আদর্শিকতার পেছনে থাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শের স্বাপ্নিক দৃঢ়তা। যার একটাই মাত্র অর্থ হতে পারে দেশের উন্নয়ন, দেশের মানুষের সার্বিক মঙ্গল, বিজাতির কাছে জাতির স্বাধীনতাকে বিকিয়ে দেওয়া নয়। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিক পরিসরে একজন রাজনীতিকের পক্ষে এই কথা কেবল কোনও কথার কথা নয়।
দেশকে অবশ্যই আদর্শিক রাজনীতির পথে ফিরে যেতে হবে। যে-কোনও রাজনীতিক দলের ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য। যে যত কথাই বলুন না কেন, প্রত্যেকটি দলকে কার্যত আদর্শিক রাজনীতির পথেই ভবিষ্যতে রাজনীতির পথ মাপতে হবে। অন্যথায় গণবিচ্ছিন্নতার গর্তে পড়ে পুরো দলটাই একদিন হারিয়ে যাবে। ভুলে গেলে চলবে না, প্রতারণার রাজনীতির দিন শেষ হয়ে এসেছে।