বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর জেলাজুড়ে জনমনে আলোড়ন তোলেছে। গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের সংবাদ শিরোনাম ছিল ‘বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৫ জনের’। অন্যদিকে একটি পত্রিকার শিরোনাম ছিল, ‘সর্বনাশা বজ্র আবারও কেড়ে নিল ৫ প্রাণ’ এবং তাতে বজ্রপাতে মৃত্যু নিয়ে মানববন্ধনের একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
পত্রিকায় মানববন্ধনের খবরে লেখা হয়েছে, “অতিসত্বর হাওরে বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে বজ্রনিরোধক দ- অথবা টাওয়ার নির্মাণ, গভীর হাওরে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, হাওরে প্রচুর পরিমাণে তাল গাছ রোপণ, বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ার কারণ ও প্রতিকারে গবেষণা করা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সাহায্য প্রদানের পরিমাণ ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার করার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।”
হাওরে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু নতুন কোনও ঘটনা নয়। আনাদিকাল থেকে হাওরে এমন মৃত্যু স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু এবার বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা আগের বছরগুলোর তুলনায় অস্বাভাবিক বেশি। যার ফলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা এই প্রাকৃতিক ঘটনার মানুষের দ্বারা সম্ভব প্রতিকার প্রত্যাশা করে বিভিন্ন সম্ভব-অসম্ভব দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে মানববন্ধনে ব্রতী হয়েছেন। তা যা’-ই করা হোক, কথা হলো প্রকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে চট করে কীছু করা যায় না, কার্যকর কীছু করতে হলে ভাবনা চিন্তা করে, আঁটঘাঁট বেঁধে পরিকল্পনামাফিক কাজ বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে হবে। প্রকারান্তরে কোনও না কোনও কার্যকর প্রযুক্তি অবশ্যই দরকার হবে। এছাড়া আর যা কীছুই করা হোক না কেন, কোনও ফলোদয় হবে না। প্রকৃতিকে ঠেকাতে প্রকৃতির নিয়ম মেনে, প্রকৃতির নিয়মকে জেনে, কোনও একটা জুতসই বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। মনে এই কথা গেঁথে নিতে হবে, প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তি ভিন্ন গত্যান্তর নেই। বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু প্রতিরোধ করতে চাইলে বিজ্ঞানের দ্বারস্থ হতেই হবে। বিজ্ঞানের করুণা ভিন্ন এক্ষেত্রে মানুষের বাঁচার কোনও অলৌকিক উপায় নেই।
দাবি উঠেছে, বজ্রনিরোধক দ- ও টাওয়ারসহ গভীর হাওরে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করার। সেই সাথে হাওরে প্রচুর পরিমাণে তালগাছ ও সুপারিগাছ রোপণের দাবি জানানো হয়েছে। গাছ থেকে বজ্রনিরোধকসেবা পেতে একটি নির্দিষ্ট সময় লাগবে। গাছকে বড় হতে সময় দিতে হবে। এই বছরগুলো বজ্রপাত অবশ্যই বন্ধ থাকবে না। সত্বর ফল লাভের আশায় বজ্রপাতে মৃত্যু প্রতিহতকরণের কাজে তালসুপারি রোপণ প্রকল্প বাদে অন্য দু’টি প্রকল্পের কথা ভাবা যেতে পারে। মনে হয় এই দু’টি প্রস্তাব মন্দ নয়। কার্যকর করা যেতে পারে। বর্ষায় হাওরাঞ্চল প্রায় ছয় মাসের অধিক সময়ের জন্যে জলের তলে তলিয়ে যায়। এতো দীর্ঘসময় ক্ষেতের আলে রোপণ করা তালগাছ বজ্রপাত নিরোধে নিজেকে নিবদিত করার জন্য বেঁচে থাকবে কিনা জানা নেই। আর বেঁচে থাকলেও একমানুষ সমান লম্বা হতে তালগাছ সময় নেবে একযুগেরও বেশি।
বজ্রপাতের রুদ্ররোষ এবারের মতো সহ্য করেই নিতে হবে। আগামীতে যাতে এই ভয়ংকর বজ্রপাতরূপ মৃত্যুদূতের গ্রাস থেকে মানুষ প্রাণেরক্ষা পায় তার ব্যবস্থা যেভাইে হোক করা অবশ্য কর্তব্য। সরকার-প্রশাসন এবং বিশেষ করে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রকদের অবশ্যই সে কথা ভুলে বসে থাকলে চলবে না।