1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোয় বিদ্যমান দুর্নীতিকে অপসারণ করতে হবে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৮ মে, ২০১৮

গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, ‘ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ’। সংবাদের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরহাটি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুর জামালের বিরুদ্ধে ওই ওয়ার্ডের শতাধিক ভিজিএফ কার্ডধারীর চাল, তিনি নিজে রেখে দিয়ে কার্ডধারীদের মধ্যে শুধুমাত্র পাঁচশত টাকা করে বিতরণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী কার্ডধারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।’
এই সংবাদটি বাংলাদেশের গ্রাম পর্যায়ে দুর্নীতির শিকড় বিস্তারের মামুলী ও যাকে বলে একেবারেই আণুবীক্ষণিক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি বিবরণ মাত্র। গ্রামের যত্রতত্র ভিন্ন ভিন্ন কৌশল-প্রকরণে দুর্নীতি, প্রতারণা, গুম, খুন, ধর্ষণ, দলধর্ষণ, ডাকাতি, অপদখল, অপহরণ, মারামারি সংঘটিত হচ্ছে। এমনকি পরিকল্পিত চক্রান্ত সাফল্যের সঙ্গে রীতিমতো সংগঠিত চক্র পর্যন্ত কার্যকর আছে। পত্রিকায় প্রকাশিত গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন সংবাদ পাঠ করে মনে হয় গ্রাম আসলে অপরাধীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। এমনকি গ্রামান্তরে বিস্তার লাভ করেছে আন্তঃজেলা ডাকাতচক্রের তৎপরতা। বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ডাকাতির সঙ্গে এইসব আন্তঃজেলা ডাকাতচক্রের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে সংবাদপত্রের বিভিন্ন সংবাদে প্রমাণ মেলে। এই তো গত ক’দিন আগে এরকম একটি আন্তঃজেলা ডাকাতদল সুনামগঞ্জের পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় ধরা পড়ার সংবাদ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল।
মোটকথা গ্রামের সমাজ এমন হয়ে পড়েছে যে, মনে হয় গ্রামীণ অর্থনীতি অনেকটা লুটপাটের অর্থনীতিতে পর্যবসিত হয়ে পড়েছে। গ্রামে একদল দুর্নীতিবাজ লোকের আবির্ভাব ঘটেছে, যারা গ্রামীণ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের শক্তিসঞ্চয় করতে পেরেছে এবং সে-শক্তির জোরে জবরদখল করে রেখেছে রাজনীতি, অর্থনীতি, এমনকি মানুষের মনোজাগৎকে পর্যন্ত। তারা নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে পুরো সমাজকে কব্জায় নিয়ে এসেছে। তাই সংবাদপত্রে পড়তে হয়, “[…] তিনি শতাধিক ভিজিএফ কার্ডধারীদেরকে পাঁচশত টাকা করে দিয়ে তাঁদেরকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। এমনকি তাঁদের নামে বরাদ্দ পাওয়া চাল তিনি নিজে নিয়ে যাবেন বলে তাঁদেরকে জানান। … এলাকায় খুবই প্রভাবশালী। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে তিনি আমাদেরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।” জানা কথা এই রকম প্রতারক জনপ্রতিনিধি সংখ্যায় অল্প কিন্তু গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোয় তারা শক্তিধর ও প্রবল প্রতাপশালী। তারা তাদের এই শক্তিকে দুর্নীতি, প্রতারণা, গুম, খুন, ধর্ষণ, দলধর্ষণ, ডাকাতি, অপদখল, অপহরণ, মারামারি সংঘটিত করার কাজে ব্যবহার করে গ্রামের পুরো সমাজকে প্রকারান্তরে অশান্ত, অস্থির করে তোলেছে। এর থেকে রেহাই চাই। গ্রামীণ সমাজের এই অধঃপতনের দায় সরকার-প্রশাসন কিংবা রাজনীতিবিদ, এককথায় রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রকরা, কেউই অবশ্য এড়াতে পারেন না। অবক্ষয় কিংবা অধঃপতন মানুষের সৃষ্ট বলে অবশ্যই মানবিক। পৃথিবীতে আবির্ভূত যে-কোনও অধঃপতনের দায় তাই মানুষেরই। ইতিহাস তার সাক্ষী। পৃথিবীতে দুই দুইটি বিশ্বযুদ্ধ হয়েছে। জনপদে পারমাণবিক বোমা ফেটেছে নয়, ফাটানো হয়েছে দুইটি। পারমাণবিক অস্ত্রপরীক্ষা চলছে পৃথিবীর দিকে দিকে। সমাজের স্বাভাবিক বিকাশের ফেরে পড়ে তার জবাব রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রকদেরকে ইতিহাসের পাতায় সমালোচনার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হলেও ইতোমধ্যে দিতে হয়েছে এবং হবে। যে-ভাবে কালে কালে অগণন প্রাণক্ষয়ের বিনিময়ে জবাব দিতে হয়েছে মহাকালের বিচারসভায়, ঘাড় পেতে নিতে হয়েছে দ-। এর থেকে কারও রেহাই নেই। কোনও মানুষের নয়। কোনও সমাজ-রাষ্ট্রের তো নয়ই।
এইসব সংবাদচিত্র গ্রামের একটাই চিত্র তোলে ধরে গ্রাম আসলে ভালো নেই। বাংলাদেশে গ্রামের সংখ্যা বলা হয় ৬৮ হাজার। বলা হয় গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। এই ৬৮হাজার গ্রামকে উন্নয়নের স্পর্শ দিলেই চলবে না, গ্রামীণক্ষমতা কাঠামোয় বিদ্যমান দুর্নীতিকে অপসারণ করে নতুন গ্রামীণ আর্থব্যবস্থা গড়ে তোলতে হবে, যে-আর্থব্যবস্থায় ধনী কৃষক গরিব কৃষকে এবং গরিব কৃষক নিঃস্ব কৃষকে পর্যবসিত হওয়ার পুঁজিবাদী প্রক্রিয়া প্রতিরোধ হবে। অন্যথায় গ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা কোনওভাবেই সম্ভব হবে না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com