1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৪ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ : ৩০ প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি

  • আপডেট সময় বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

শামস শামীম ::
সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করার সর্বশেষ নির্দেশনা ২৮ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যেই কাজ করার নির্দেশনা থাকলেও এখনও ৩০টিরও অধিক প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওরের ঝুঁকিপূর্ণ ১০ প্রকল্পের কাজ কখন শুরু হবে জানেননা সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকরা। তাছাড়া এই উপজেলার মহালিয়া হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধেরও একই অবস্থা। জেলার ফসলরক্ষায় অনুমোদিত বাকি প্রকল্পগুলোতেও বিলম্বে কাজ শুরু হয়েছিল। ফলে নির্ধারিত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, উপজেলা থেকে স্থানীয় অনেক ইউপি চেয়ারম্যানদের অলিখিত সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ায় তারা নানা অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন-পরিবর্ধনের কারণে পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) ৯৪৭টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩০টি প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। প্রথমে এক হাজারের মতো পিআইসি মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হলেও প্রায় দেড় শতাধিক ‘অপ্রয়োজনীয়’ পিআইসি বাতিল করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তবে এখনও ফসলরক্ষার নামে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, কাবিটা নীতিমালায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্ন করতে প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রকল্প অনুমোদন ও প্রকল্প গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গণশুনানী করে হাওর এলাকার কৃষকদের পরামর্শ ও অংশগ্রহণে পিআইসি গঠনের নির্দেশনা থাকলেও অন্যান্য কাজে ব্যস্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে পরামর্শ করেই প্রকল্প গ্রহণ করেন। এতে অনেক ইউপি চেয়ারম্যান পছন্দের লোকদের দিয়ে পিআইসি করে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পও গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ। অনেক পিআইসিতে চেয়ারম্যানরা তাদের ভাই, ভাতিজাসহ স্বজনদের দিয়ে কমিটি করে দিয়েছেন।
জানা গেছে, হাওরের ফসলের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও চেয়ারম্যানরা নিজেদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করতে গ্রামীণ রাস্তাও প্রকল্পে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। ফলে সরকারের ফসলরক্ষার বরাদ্দ ভিন্ন কাজে ব্যবহার হচ্ছে বলে সরেজমিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে জানিয়েছেন হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
গত সোমবার দিরাই উপজেলার জগলদল এলাকার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেন হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। এসময় উপকারভোগী কৃষকরা তাদেরকে জানান, প্রকল্পে বাঁধ এলাকার কৃষকদের বদলে ইউপি চেয়ারম্যানরা তাদের ঘনিষ্ঠদের দায়িত্ব দিয়েছেন। তাছাড়া কাজেরও মানও অত্যন্ত নি¤œ বলে তারা জানান।
জানা গেছে, জেলার অন্যতম বড় হাওর তাহিরপুরের মাটিয়ান হাওরের বোয়ালমারা এলাকার দুটি ইউনিয়নে প্রায় ১০টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এই প্রকল্পগুলোতে কাজ শুরু হয়নি। পাশের মহালিয়া হাওরেও মাত্র কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শুরু না কারার বিষয়টি স্বীকার করে সংশ্লিষ্টরা জানান, বিলম্বে পানি নামার কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে ২-১ দিনের মধ্যে কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে তারা জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই দুটি হাওরের যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও গভীর প্রকৃতির। শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের উজানগাঁওয়ের খালের বাঁধ, শর্মার খাল, গোবিন্দপুর-শশারকান্দা বেড়িবাঁধ এবং জয়পুর বাঁধের কাজ এখনো শুরু হয়নি। এসব এলাকায় প্রায় ৬টির মতো প্রকল্প রয়েছে। সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের জিরাগের খাড়া এলাকায়ও এখনো কাজ শুরু হয়নি। জিরাগের খাড়া দিয়েই গত বছর জোয়ালভাঙ্গা হাওরের ফসল তলিয়ে গিয়েছিল। এভাবে জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৩০টির অধিক প্রকল্পের কাজ এখনও শুরুই হয়নি।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, আমরা গত সোমবার দিরাই উপজেলার জগদলে গিয়ে দেখেছি অত্যন্ত নি¤œমানের কাজ হচ্ছে। কাগজে-কলমে সেই কাজে চেয়ারম্যানের নাম না থাকলেও কাজের পিছনে রয়েছেন তারা। তারা নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। ফলে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির পাশাপাশি এবার প্রকল্প গ্রহণেও দুর্নীতি হয়েছে।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, গত রোববার আমি শাল্লা উপজেলার ৭টি প্রকল্প ঘুরে এসেছি। সেই সাতটির একটিতেও কাজ শুরু হয়নি। কাজ কবে শুরু হবে কেউ জানেনা।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা কমিটির সভাপতি পূর্ণেন্দু দেব বলেন, তাহিরপুরের মাটিয়ান ও মহালিয়া হাওরের প্রায় ১৫টির মতো প্রকল্পে কাজ শুরু করা যায়নি আশপাশে পানি থাকার কারণে। তবে এখন পানি নেমে যাওয়ায় আগামীকাল থেকে কাজ শুরু করা হবে। আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। তিনি বলেন, এই দুটি হাওরের যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে তার দৈর্ঘ্য কম, তবে গভীরতা বেশি। যার ফলে এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, আমি জেলা কমিটির সদস্যসচিব হলেও উপজেলা থেকে আমাকে কাজের অগ্রগতি বা অন্যান্য বিষয়ে কোনও তথ্য পাঠানো হচ্ছেনা। কি পরিমাণ কাজ হয়েছে এবং কতগুলো কাজ এখনও শুরু করা যায়নি এই তথ্য তারা আমাকে জানাচ্ছেন না। তবে আমি বিভিন্ন মাধ্যমে খবর নিয়ে জানতে পেরেছি ৩০টির মতো প্রকল্পে এখনও কাজ শুরু করা যায়নি। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com