গ্রামীণ উন্নয়নে দরিদ্র, শ্রমজীবী গ্রামীণ জনশক্তিকে কাজ দেয়ার জন্য সরকার কর্মসৃজন প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু এ প্রকল্পের টাকায় কর্মসৃজন না করে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন কোনো কোনো প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টর সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা। তারা যোগসাজশে যৎকিঞ্চিৎ কাজ দেখিয়ে প্রকল্পের অর্থ তুলে নিজেদের উদরপূর্তি করছেন। অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজনের এই প্রকল্পের টাকা অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে ফেরত যাওয়া নিয়ে গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
সংবাদ থেকে জানা যায়Ñ গত ২৪ এপ্রিল কর্মসংস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৩ হাজার ৯২৫ জন শ্রমিকের বিপরীতে সুনামগঞ্জে ১১ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। জনসংখ্যা অনুপাতে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৮১ লক্ষ ৪ হাজার, ছাতকে ১ কোটি ৩৭ লক্ষ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৯০ লাখ ৮ হাজার, দিরাইয়ে ১ কোটি ১৩ লাখ ৩৬ হাজার, ধর্মপাশায় ১ কোটি ১৪ লাখ ২৪ হাজার, দোয়ারাবাজারে ১ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার, জগন্নাথপুরে ৯২ লাখ ২৪ হাজার, জামালগঞ্জে ৮২ লক্ষ ৫৬ হাজার, শাল্লায় ৬৪ লক্ষ ৬৪ হাজার, সুনামগঞ্জ সদরে ১ কোটি ৭ লাখ ৬৮ হাজার এবং তাহিরপুরে ১ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। নিয়মানুযায়ী ৪০দিন কাজ করানোর কথা থাকলেও কাজ হয়েছে ৫-৭দিন। এক স্থানে ভিন্ন নামে কৌশল করে একাধিক প্রকল্প নিয়েও বরাদ্দে নয়ছয় করা হয়েছে।
নিয়মানুযায়ী এই বরাদ্দ তালিকাভুক্ত শ্রমিকদের একাউন্টে চলে যায়। তবে মাস্টাররোল জমা করে সেই টাকা উত্তোলন করেন সংশ্লিষ্ট ইউপির প্রকল্প চেয়ারম্যান। ব্যাংকে কখনো শ্রমিকদের নিলেও টাকা উত্তোলনের পরপরই তা হাতিয়ে নেন চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। অভিযোগ আছে এই টাকায় যৎসামান্য কাজ করিয়েই লোপাট করা হয়। এই টাকার ভাগ পিআইও অফিসও পেয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরকার গ্রামীণ দরিদ্র মানুষদের বাঁচিয়ে রাখতে ও স্বল্প সময়ের জন্য হলেও তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে এবং একইসঙ্গে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মসৃজন প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পে শ্রমিকদের জবকার্ড ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কথাটি সত্য যেÑ দরিদ্র্য এবং দিনমজুর মানুষরা সারাদিন কাজ করার পরও প্রভাবশালী চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের আদেশ তারা অমান্য করতে পারে না, এমনকি প্রতিবাদও করতে পারে না। যদিও কর্মসংস্থানের টাকা তাদের নামেই ব্যাংক একাউন্টে চলে আসে কিন্তু সেই টাকা উত্তোলনের পরপরই কোনো কোনো মেম্বার-চেয়ারম্যান তাদের টাকার অধিকাংশ ভাগই জোরপূর্বক রেখে দেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
আমরা মনে করিÑ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রকল্পসমূহের অন্যতম এই কর্মসৃজন প্রকল্প। এটি একটি মহতি উদ্যোগ হলেও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে দুর্বলতা থাকায় গরিবের হক সহজেই নষ্ট করা হচ্ছে। তাদেরকে এই প্রকল্পের সুফল হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঠিক কার্যক্রমে দুর্বলতা থাকায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প দুর্নীতি মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তৃণমূল পর্যায়ের প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের নজরদারি আরো বাড়ানো উচিত। তা না হলে হতদরিদ্র্য মানুষের জীবন-জীবিকা চালানো সম্ভব হবে না। যদিও দিনমজুর, শ্রমিক এমনকি হতদরিদ্র্য মানুষের অর্থনৈতিক দুঃখলাঘবের জন্য সরকারের আপ্রাণ চেষ্টা থাকলেও কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেদের স্বার্থহাসিলের জন্য সরকারের পুরো উন্নয়ন কর্মকা-ে বাধা সৃষ্টি করে চলছে। এমতাবস্থায় দুর্নীতি এবং অনিয়ম কঠোরভাবে দমন করতে সরকারকে আরো সুদৃষ্টি দিতে হবে।