সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পক্ষে এনে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানে সরকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে এক প্রশ্নের জবাবে একথা জানান সরকার প্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, “নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের জোর সমর্থন আদায়ে সফল হয়েছে।
“আমরা কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।”
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে থাকা মিয়ানমারও দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পক্ষপাতি। তবে বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে থাকা ১০ লাখ নাগরিককে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে তাদের গড়িমসিও প্রকাশ পাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ একটি খসড়া হস্তান্তর করেছে। এটি নিয়ে দুই দেশই পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।”
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি একদিন আগেই বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে চলতি সপ্তাহেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করছেন।
কয়েক যুগ ধরে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অবস্থানের মধ্যে গত আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সহিংসতা শুরু হলে বাংলাদেশ সীমান্তে নামে রোহিঙ্গাদের ঢল। প্রায় তিন মাসে নতুন করে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ইতোমধ্যে ৬ লাখ ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ দিন ধরেই পুরনো শরণার্থীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়ে আসছিল। তবে মুসলিম এই জনগোষ্ঠীকে নাগরিক হিসেবে মানতে নারাজ মিয়ানমার তাতে গা না করে নানা অপপ্রচার চালিয়ে আসছিল, যা নানা সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর বক্তব্যেও আসে।
রাখাইনে নির্যাতনের মুখে নতুন করে শরণার্থীদের ঢল নামার পর বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সরব হয়, বাংলাদেশ নানা আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টি তোলে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও রোহিঙ্গাদের ফেরত নিয়ে নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস নিশ্চিতে মিয়ানমারের উপর চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সংসদে শেখ হাসিনা বলেন, “মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ শুরুর পর হতেই বাংলাদেশ সোচ্চার হয়েছে।
“অতি দ্রুত বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আনা হয়েছে। অসহনীয় নির্যাতন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত গঠন ও মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য কূটনৈতিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের জোর প্রচেষ্টা চালানোর ফলে রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে আজ বিশ্ব জনমত গঠিত হয়েছে।”
এদিকে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মধ্যেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে হত্যা-ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন দিয়েছে, যা নিয়েও তারা সমালোচনায় পড়েছে।
মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে সরকার ‘দৃঢ় প্রতিজ্ঞ’ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়া ছিল আমাদের অত্যন্ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এ কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কণ্ঠে গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে উচ্চারিত হচ্ছে।
“এদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করাসহ এ সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে জোরালো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন, বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন।”
শরণার্থী রোহিঙ্গারা বর্তমানে কক্সবাজারে কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে। সেখানে তাদের নিবন্ধন করা হচ্ছে। দৈনিক গড়ে ১১ হাজার রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন হচ্ছে বলে সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী।
গত ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৪৬০ জনের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধনের কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।