1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১১:৪৭ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর : মুহাম্মদ বদরুল হুদা

  • আপডেট সময় বুধবার, ২১ জুন, ২০১৭

লাইলাতুল কদর উম্মতে মুহাম্মাদির এক শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। আল্লাহর প্রেমে সিক্ত হওয়া, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত অর্জনের এক বিশেষ সুযোগ রয়েছে এ রাতে। উম্মতে মুহাম্মাদির শ্রেষ্ঠত্বের এক অন্যতম নিদর্শন এ রাত। এ রাতের ফজিলত আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেছেন ¯পষ্টভাবে, নাযিল করেছেন স্বতন্ত্র একটি সূরাও। নির্জনে, নীরবে একাগ্রচিত্তে এ রাতে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য হাসিল করা সম্ভব। তবে সাধারণ জনগণকে আমলের প্রতি উৎসাহ প্রদানার্থে মসজিদে আনুষ্ঠানিকভাবে সব রাতে না পারলেও কোন এক রাতে সম্মিলিতভাবে ইবাদত-বন্দেগী করাতে কোন দোষ নেই, বরং উত্তম। নিচে পাঠক সমীপে এ রাতের ফজিলত, আমল সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো।
লাইলাতুল কদরের ফজিলত :
১. কুরআন অবতীর্ণের রাত : মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা কদরের ১ নং আয়াতে ইরশাদ করেন, “আমি একে (কুরআন) শবে কদরে অবতীর্ণ করেছি।”
২. এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রজনী : আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা সুরা কদরের ৩ নং আয়াতে ইরশাদ করেন, “শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।” ইমাম তাবারী (রহ.) তার তাফসিরে তাবারিতে উল্লেখ করেন, “লাইলাতুল কদরের আমল হাজার মাসের আমলের চেয়েও উত্তম যার মধ্যে অন্য কোন কদরের রাত নেই ”(তাফসিরে তাবারি)। আর এ বক্তব্যকে ইমাম ইবনে কাসির (রহ.) তদীয় তাফসির গ্রন্থে সত্যায়ন করেছেন।
৩. বরকতময় রজনী : সূরা দুখানের ৩ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, “নিশ্চয় আমি ইহা (কুরআন) কে অবতীর্ণ করেছি একটি বরকতময় রাতে।” আর এ রাত হল শবে কদর। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, শবে কদরে হজরত জিবরাইল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট একদল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত অথবা জিকিরে মশগুল থাকে তাঁদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। (মাযহারি)
৪. গুনাহ মাফ : রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানসহকারে ও সওয়াবের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে (রাত্রি জাগরণ করবে), তার পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে”। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং- ১৮০২)
৫. সমস্ত কুমন্ত্রনা থেকে মুক্ত : বরকতময় এ রজনীটি মহান আল্লাহ সমস্ত কুমন্ত্রনা, শয়তানি ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্ত রেখেছেন, অকেজো রেখেছেন শয়তানের সমস্ত কাজকে। হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.) বলেন, “শয়তান এ রাতে কাউকে ক্ষতি বা রুগ্ণ করতে পারে না, অথবা কোন বিশৃঙ্খলা ঘটাতে পারে না এবং কোন যাদুকর তার যাদু কার্যকর করতে পারে না।”
কোন তারিখে শবে কদর?
রমজান মাসের কোন তারিখে শবে কদর এ ব্যাপারে পবিত্র হাদিস ও তাফসির গ্রন্থসমূহে একাধিক মত পাওয়া যায়। নিচে এ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলোÑ
১. শবে কদর রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে : “হযরত উবাদাতা ইবনে সামেত (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, লাইলাতুল কদর হচ্ছে (রমজানের) শেষ দশকে। যে ব্যক্তি সওয়াবের আশায় এ রাতে জাগরণ করবে আল্লাহ তায়ালা তার পূর্বাপর গুনাহ ক্ষমা করবে। আর সে রাত্রিটি বেজোড় রাত্রিতে ঊনত্রিশ, সাতাশ, পঁচিশ, তেইশ অথবা একুশ তারিখে” (ইমাম ইবনে কাসির, তাফসিরে ইবনে কাসির, দারুল হাদিস, কায়রো, খ- : ৮ম)। হযরত আয়েশা (রা.) শবে কদর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, হে রাসুলুল্লাহ! আমি যদি লাইলাতুল কদর পাই তখন কী করব? তখন নবী করিম (সা.) বলেন, তুমি বলবে, হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসেন – অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। (তিরমিযি)
২. রমজানের ২৭ রাত্রিতে শবে কদর : ইমাম মুসলিম (রহ.) তার সহিহ মুসলিম শরিফে উল্লেখ করেন, “হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.) রাসুল (সা.) হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই উহা (শবে কদর) রমজানের সাতাশ তারিখ। ( সহিহ মুসলিম, হাদীস নং : ২৮৩৪) “হযরত মুয়াবিয়া, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এছাড়া আরো অনেক সাহাবী রাসুল (সা.) হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই উহা (শবে কদর) হচ্ছে (রমজানের) ২৭ তারিখে। আর এটা একদল সালফে-সালেহিন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম আবু হানিফা (রহ.)ও বর্ণনা করেছেন।” (তাফসিরে ইবনে কাসির,) সুপ্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী মুফাচ্ছিরগণের ইজমা হলো রমজান মাসের ২৭ রাত্রিতে শবে কদরের অধিক সম্ভাবনা রয়েছে। রাসুলে করিম (সা.) ইরশাদ করেন, শবে কদরকে আল্লাহপাক বিশেষভাবে আমার উম্মতকেই দান করেছেন, পূর্বের কোন উম্মতকে এ নেয়ামত দান করা হয় নাই। রাসুল (সা.) বলেন, পূর্বের জামানার উম্মতদের হায়াত বেশি ছিল। তারা বেশী ইবাদত-বন্দেগী করার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু আমার উম্মতের হায়াতের পরিমাণ অনেক কম। তাই তারা যদি নেক আমলের ক্ষেত্রে তাদের বরাবর হতে চায়, তাহলে তা কিছুতেই সম্ভব নয়। তখন রাসুল্লাহ (সা.) এর মনটা কেমন যেন একটু ছোট হয়ে গেল, তখন আল্লাহ পাক তাঁর পেয়ারা হাবীবকে খুশি করার জন্য তাঁকে এবং তাঁর উম্মতকে এই মহামূল্যবান রাতটি দান করেন।
সমাধানমূলক বক্তব্য:
উপর্যুক্ত বর্ণনা থেকে একথা ¯পষ্ট হয় যে, রমজানের শেষ বেজোড় রাতের যে কোন এক রাত্রিতে শবে কদর। আমাদের দেশে মসজিদসমূহে সাধারণত মানুষকে আমলের প্রতি উৎসাহ দেয়ার উদ্দেশ্যে শবে কদরের ফজিলত বর্ণনা করার মানসে আনুষ্ঠানিকভাবে সাতাশ তারিখে যে শবে কদর পালন করা হয় তাও হাদিস, সালফে-সালেহিন ও মুজাতাহিদ ইমামগণের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং একে ভিত্তিহীন বলার সুযোগ নেই। তবে শবে কদরকে শুধু একরাতেই নির্দিষ্ট করা ঠিক নয়। বরং, রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোকে শবে কদর মনে করেই ইবাদত-বন্দেগী করা উচিত। সম্ভব হলে শেষ দশদিন মসজিদে ইতেকাফ করে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভে চেষ্টা করা। আর ইতিকাফকারী ব্যক্তি নিশ্চিত শবে কদর লাভে ধন্য হন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের এ রাতে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগী করার তাওফিক দান করুন, আমিন। (শিক্ষার্থী : কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়, মিশর)

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com