1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

এমএ মান্নানের হিজল বাড়িতে এক ঘণ্টা

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৭ মে, ২০১৭

শামস শামীম ::
শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টা। চারপাশটা তালনিরাই। দেশব্যাপী সজ্জন রাজনীতিবিদ হিসেবে বিশেষ পরিচিত প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানের ছায়াঘেরা ‘হিজল’ বাড়িটি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের উপস্থিতিতে গম গম করছে। সবার হাতেই বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সম্বলিত আবেদনপত্র। নেতার সুপারিশ নিতে এসেছেন।
মানুষের ভিড় ঠেলে, আধা ঘরসমেত দেয়াল পেরিয়ে আমরা (আমি আর মার্কসবাদী চিন্তাবিদ প্রভাষক এনামুল কবির) যখন প্রতিমন্ত্রীর সাদামাটা টিনশেড ভবনে ঢুকে দেখি লুঙ্গি ও হাফ স্যান্ডো গ্যাঞ্জি পরা এক পরিচ্ছন্ন ঋষি। বয়সকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে কথা বলে যাচ্ছেন সাবলীল। নেতাকর্মীদের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। যোগ্য ও ত্যাগীদের দিয়ে সক্রিয় কমিটি করার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন উন্নয়ন কর্মকা-ের।
পশ্চিমের দেয়ালঘেঁষা সোফায় বসে কথা বলছিলেন তিনি। তার ঠিক মাথার উপর প্রয়াত ¯েœহময়ী মায়ের একখানা ছবি টাঙানো। মা যেন দূরপ্রান্ত থেকে আশীর্বাদের ছায়া হয়ে ঘরজুড়ে আছেন। ঘরে কোন চাকচিক্য নেই। একটি সিঙ্গেল সোফা, ডাবল আরেকটি এবং প্লাস্টিক ও কাঠের কয়েকটি চেয়ার। জৌলুসহীন বসতঘরে চারদিকে কয়েকটি পারিবারিক ছবি টাঙানো। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী তিনি। বসতঘরে আভিজাত্যের কোন চিহ্ন না থাকলেও একটি মা মা ঘ্রাণ ছিল। সেই ঘ্রাণেই প্রাণচঞ্চল কৈশরিক উচ্ছ্বাসেই দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ডুংরিয়া গ্রামের শান্তির নীড় হিজল বাড়িতে কাজ করছিলেন প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান।
ঘরে ঢুকার আগেই তাঁর চোখে চোখ পড়তেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা থামিয়ে বললেন ‘শামস শামীম আইছো, বউ’। নেতাকর্মীদের জায়গা ছেড়ে দিতে বললেন। আমরাও চুপটি করে বসে পড়ি। তিনি কথা বলছিলেন। এলাকার উন্নয়ন কাজের জন্য ডিও লেটার দিচ্ছিলেন। আবেদনে সুপারিশও করছিলেন। মাঝে-মধ্যে বলছিলেন শামস শামীম বউ, কোন জরুরি কাজ থাকলে কউ, এরারে বাইর কইরা দেই! আমি তার আন্তরিকতাপূর্ণ কথায় লজ্জিতই হচ্ছিলাম। বলি, শান্তিগঞ্জ আসছিলাম লিডার, এলাকায় আছেন জেনে দেখা করতে এলাম।
হাওরের প্রকৃতিসুন্দর বৃক্ষ হিজল। ডালপালাময় মাঝারি গড়নের দীর্ঘজীবী প্রজাতির বৃক্ষ। বৃক্ষটি ‘জলন্ত’ ‘নদীক্রান্ত’ নামেও পরিচিত। বাড়ির নামটি এই নামের রাখার কারণও বুঝা গেল বাড়ির চারপাশটা দেখে। জলা আর খাল ঘেরা বাড়িটি প্রবল প্রাণশক্তি সম্পন্ন প্রজাতির বৃক্ষ-‘হিজল’Ñ নামটিকে সার্থকতা দিয়েছে। পুরো গ্রামেরই ছবি এরকম। গ্রীষ্ম-জ্যৈষ্ঠে হিজল হালকা গোলাপি ফুল ফুটলেও সন্ধ্যার কারণে ঝুলন্ত ফুলের গুচ্ছ দেখতে পারিনি হিজল বাড়িতে। তবে এক ধরনের মিষ্টি মাদকময় ফুলের ঘ্রাণ অনুভব করেছিলাম।
সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বাড়িটিতে ঢুকি। বের হই ঠিক সোয়া আটটায়। এই এক ঘণ্টায় ক্ষমতাসীন সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির প্রাণচঞ্চল কর্মতৎপরতা দেখি। দেখি এক অফুরান জীবনী শক্তি নিয়ে নানা বিষয়ে কথা বলার দৃশ্য। এলাকার ছোটো খাটো ফেলনা বিষয়ও তার নখদর্পণে রয়েছে আলাপে বুঝা গেল। মাটিগন্ধী নেতাই মনে হলো এলাকার নাড়ী-নক্ষত্রের খবর রাখার কারণে।
এর মধ্যেই এলজিইডি’র কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার ঢুকলেন। নেতাকর্মীদের আসন ছাড়িয়ে দিয়ে তাদের বসার স্থান করে দিলেন। ইঞ্জিনিয়ার মহোদয়গণ নানা প্রকল্পের ফিরিস্তি দিচ্ছিলেন। কোথায় কি করতে হবে, প্রকল্প জটিলতা এসব নিয়ে বলছিলেন কথা। এতদিন ধরে জিগারকান্দি গ্রামের ব্রিজের কাজ কেন সমাপ্ত হচ্ছেনা জানতেই চাইলেন তিনি। তিন বছর ধরে কাজটি না হওয়ায় ক্ষোভও ঝাড়লেন। নির্দেশনা দিলেন দ্রুত কাজ শেষ করার। ইঞ্জিনিয়ারদের উদ্দেশে বললেন, আমার নির্বাচনী এলাকার যেখানে ব্রিজ, কালভার্ট দরকার তার তালিকা-প্রকল্প তৈরি করে এক সপ্তাহের মধ্যে দিন। যেখানে দরকার খুঁজে বের করুন কোথায় পুল কালভার্ট লাগবে’। আমি এলাকার মানুষের চলাফেরার আজাব দূর করতে চাই। আরো বলেন, এই খাতে (ব্রিজ-কালভার্ট) ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প করে দিন। আমি অর্থ ছাড় করাব’। শুধু যে নিজের নির্বাচনী এলাকা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তা নয়। পুরো জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন নিয়েও কথা বলেন তিনি। এসময় নির্বাচনী এলাকার বাইরের নানা অঙ্গনের মানুষকেও নানা সহায়তার জন্য আসতে দেখা গেল।
হাওর অধ্যুষিত জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ জল-জলা-নদ-নদী ঘেরা। যোগাযোগ বিড়ম্বিত দুর্গম এলাকা। এখানকার প্রতিটি গ্রামের মানুষ যাতে সম্পূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসতে পারে সেই কথাই সংশ্লিষ্টদের বলছিলেন তিনি। যে কোন মূল্যেই বিড়ম্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থার বদনাম ঘুচানোর প্রত্যয় লক্ষ্য করি তাঁর কথায়।
এমন সময় দেখা গেল জগন্নাথপুর উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি সালেহ আহমদকে। কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে এসেছেন এমএ মান্নানের প্রচেষ্টায় সুনামগঞ্জের বহুল কাক্সিক্ষত কুশিয়ারা সেতু নির্মাণকাজ নিয়ে কথা বলতে। এই সেতুটি জেলার দক্ষিণাঞ্চলের আশীর্বাদই নয়, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে দিবে তিন ঘণ্টা। সেতুটিতে যাতে দ্রুত গতিতে কাজ চলে এবং আগামী নির্বাচনের আগে উদ্বোধন হয় সেই অনুরোধ করছিলেন তিনি। এভাবে জামলাবাদ গ্রামের কাজী জালাল উদ্দিনও হাওরের বেড়িবাঁধের স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি আবেদন নিয়ে এসেছিলেন। মন্ত্রী সেই আবেদনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুপারিশ করলেন। যারাই এসেছিলেন সবাইকেই সাধ্যমতো সুপারিশ করেন। সবাই নেতার সাহচর্য্য ও সুপারিশ পেয়ে মনে মনে প্রশান্তি নিয়েই বিদায় হচ্ছিলেন বলে মনে হলো। এর মধ্যে যারাই আসছিলেন তাদের প্রায় সবাইকেই রঙ চা ও বিস্কুটে আপ্যায়ন করালেন।
ঠিক সোয়া আটটায় তিনি মূল বাড়ির বাইরে বের হন। এই ফাঁকে আমাকে আড়ালে নিয়ে কোন জরুরি কথা আছে কি না জানতে চান। তেমন জরুরি কিছু না থাকলেও আমি দুই মিনিটে কিছু কথা সেরে বিদায় নিয়ে চলে আসি। তবে সকলের সামনে আমাকে আলাদা স্থানে নিয়ে আসায় লজ্জিতও হই।
আমরা যখন হিজল বাড়ির বহুবর্ণিন মুগ্ধতা থেকে বের হই তখন পাগলাবাজার এলাকা থেকে প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী এসে জড়ো হন বাড়িটিতে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ছাত্রলীগের অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী স্লোগান দিয়ে বাড়িতে ঢুকছিলেন।
মানুষের ভিড়ের কারণে সহজ রাস্তা এড়িয়ে আমরা গ্রামের দক্ষিণের রাস্তা দিয়ে বের হই। আসতে আসতে এনাম ভাই বলছিলেন, ‘আমরার গাঁওরে মাইনষে গাতগারার গ্রাম কইতো। গত ১০ বছরে পুরা গাঁও বদলি গেছে।’ তিনি জানালেন, খালবিলজলা ঘেরা গ্রামটি আর আগের অবস্থায় নেই। প্রতিটি রাস্তাই পাকা। গ্রাম ঘিরে বেড়িবাঁধ সদৃশ রাস্তা হয়েছে। রয়েছে বাজারে আসার তিনটি বিকল্প রাস্তা। এভাবে পশ্চাদপদ একটি গ্রাম উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে যাবে তাদের পূর্বপুরুষরা কল্পনা করেননি। একজন নেতা, একজন উন্নয়নমুখি ভালো মানুষের কল্যাণেই এমনটি হয়েছে।
আমরা যখন পাকা রাস্তা মাড়িয়ে শান্তিগঞ্জ রাস্তার খোঁজ করছিলাম তখন দেখি জলমগ্ন একটি গ্রামের চারদিকে জোনাক জ্বলছে। এ যেন এক অলৌকিক আলোর উৎস। মনে মনে প্রার্থনা করছিলাম উন্নয়নের মহাসড়কে এমএ মান্নানের হাত ধরে এগিয়ে যাক আমাদের সুনামগঞ্জ জেলা। শতায়ু হোন এমএ মান্নান।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com