1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৯ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

রাঘবদের পৌষ মাস, কৃষকদের সর্বনাশ : নির্মল ভট্টাচার্য্য

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৭
dav

উপরের শিরোনামটি আমার স্বরচিত কোন কথামালা নয়। ষাটের দশক থেকে, বিশেষত স্বাধীনতার পর থেকে হাওরাঞ্চলের কৃষিজীবী সমাজ তাদের সারা বছরের স্বপ্ন বানের পানিতে ভেসে যাওয়ার কথা, বঞ্চনার কথা আহাজারির মাধ্যমে নানাভাবে প্রকাশ করে আসছেন। আমরা নানা পেশার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাদের আহাজারিকে ব্যাকরণের ভাষায় যথাসাধ্য ছন্দোবদ্ধ করে লিখিত রূপ দেয়ার প্রয়াস পাই মাত্র। এর অর্থ এই নয় যে, আমরা তাদের সব হারানোর বেদনা নিয়ে কেবল কবিতা লিখি আর গান গেয়ে যাই। কারণ, আত্মপক্ষ সমর্থনে বেশ জোরের সাথেই বলতে পারি, ছাত্রজীবন থেকেই মানুষের অধিকার নিয়ে সোচ্চার থাকা, লড়াই-সংগ্রামে সম্পৃক্ত হওয়া এবং থালা-বাটি-কম্বলের অভিজ্ঞতা নেয়াও বাদ যায়নি। নানা টানাপোড়েন সত্ত্বেও নীতিচ্যুত না হওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা আজঅবধি করে যাচ্ছি।
দুঃখগুলোকে আবেগ বাস্তবতা আর ছন্দের মিশেল দিয়ে প্রকাশ করার মাহাত্ম্য যে কি, তা বুঝার সৌভাগ্য হয় ২০০৮ সালে দেশের প্রথম হাওর সম্মেলনে। ২০০৪ সাল থেকে জলের তোড়ে বাঁধ ভেসে যাওয়ার, বাঁধ রক্ষায় কৃষকদের প্রাণান্তকর প্রয়াস, সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে তাদের সাংবাৎসরিক লালিত স্বপ্ন নিমিষে ডুবে যাওয়া, সর্বস্বান্ত পরিবারের করুণ আর্তনাদ স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছি। হাওর রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন, এলাকাবাসীর সথে কথপোকথন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি’র সাথে বাঁধ নির্মাণের তিনটি পর্যায়ে মতবিনিময়, কমিটির সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা, বাঁধের অর্থ নিয়ে পাউবো’র হুলিখেলাসহ তৎসম্পর্কিত বিষয়ে ধারণা ও অভিজ্ঞতা অর্জনে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত থেকেছি। এই ছোট ছোট অথচ হাওবাসীর জন্য অতীব গুরুত্ববহ কাজগুলোকে জাতীয়পর্যায়ে উপস্থাপনের সুযোগ পাই ২০০৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় হাওর সম্মেলনে। তৎকালীন বিচারপতি হাবিবুর রহমান, বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতসহ দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিগণ পিনপতন নীরবতায় আমার আলোচনা শুনেছেন এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হাওরবাসীর উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়নের জোর দাবি তুলেছেন। ইতিপূর্বে প্রণীত ‘হাওর মাস্টার প্ল্যান’ ঐ সম্মেলনেরই ফসল বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
নিজেদের ফসল রক্ষার্থে আগে কৃষকরা নিজেরাই বাঁধ নির্মাণ করতেন। অকৃষক গ্রামবাসীও তাদের সাথে যুক্ত হতেন। সম্মিলিত পরিকল্পনায় টুকরি-কোদাল-খুন্তি নিয়ে একসাথে কাজে নেমে পড়তেন। নির্মিত বাঁধ টেকসই হত, ফসল ঘরে উঠত, ফিবছর জুড়ে লালিত স্বপ্নগুলো মহাধুমধামের সাথে একে একে বাস্তবায়ন করত। সাধারণত পৌষ মাস থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যেত। ওখানে একাডেমিক্যাল ম্যাপিং ছিলনা, সিএফটি-এসএফটির হিসাব ছিল না, লক্ষ টাকার কোন যোগানও ছিল না। আজ পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছে, বড় ডিগ্রিধার ইঞ্জিনিয়ার-ইস্টিমিটাররা আসছে, অথের্র যোগান দশ-বিশ কোটি ছাড়িয়ে পঞ্চাশ-ষাট কোটিতে পৌঁছেছে। সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, বেশির ভাগ কাজ তার কব্জায় চলে যাচ্ছে। পাশাপাশি ফসল ডুবছে, কৃষকের লালিত স্বপ্ন বানের জলে ভাসছে, রাঘব বোয়ালদের পেট-পকেট ক্রমেই স্ফীতকায় হচ্ছে।
বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের হাতে ন্যাস্ত করা, টেকসই বাঁধ নির্মাণের জোতসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা, বালি-পলিতে ভরে যাওয়া খালবিল-নদীগুলো খনন করা, পরিকল্পনা ও ম্যাপিংয়ে হাওরপাড়ের মানুষকে সম্পৃক্ত করা, কাজের শুরু এবং শেষ অতি-অবশ্যই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হওয়া, সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সমন্বয়ে মনিটরিং সেল গঠন করা, নানাবিধ কর্মকা-ে ব্যস্ত মাননীয় আইন প্রণেতাদের পিআইসি গঠন/অনুমোদনের ভূমিকা থেকে সরে আসা, অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রতৃতি দাবিসমূহ আজ জনদাবিতে পরিণত হয়েছে। শত-সহ¯্র কৃষক-অকৃষক জনতা আজ রাস্তায়। স্লোগান উঠেছে ‘হাওর বাঁচাও, সুনামগঞ্জ বাঁচাও’। উদীচী‘র বর্ষবরণ উৎসব ১৪২৪ হয়েছে প্রতিবাদী অনুষ্ঠান, এখানে দুর্নীতিবাজ, ঠিকাদার-সিন্ডিকেটের কুশপুত্তলিকায় সমবেত জনতা ঘৃণাভরে থুঁ থুঁ নিক্ষেপ করেছে। সবহারাদের এ প্রতিবাদ ও ঘৃণাবোধ তাদের আর্থসামাজিক-সাংস্কৃতিক ও অবরুদ্ধ মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত জোর কদমে ক্রিয়াশীল থাকলে অবশ্যই কিছু একটা হত, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
উন্নয়নকর্মী বা স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে আমরা অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে সুনামগঞ্জ ও ঢাকায় আমাদের দাবিগুলো সরকারের সুনজরে আনার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা মার্চ মাসের মধ্যভাগ থেকেই চালিয়ে যাচ্ছি। স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যম এবং সাংবাদিক বন্ধুদের অবিরাম উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। টিভি চ্যানেলগুলো হাওরবাসীর কান্না এবার বিশ্বমানবতার কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এই সম্মিলিত কর্মকা-ের ফল ইতিমধ্যেই ফলতে শুরু হয়েছে বলেই মনে হয়।
এখানেই থেমে গেলে চলবে না। নির্যাতিত-বঞ্চিত মানুষের জীবন-মানের দৃশ্যমান পরিবর্তনের জন্য সকলকে সাথে নিয়ে আরো অনেক দূর যেতে হবে, ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের আদর্শিক রূপান্তর ঘটাতে হবে। অন্যথায় যেভাবে যাদের পৌষ মাস, আর যাদের সর্বনাশ তারা তাদের ঠিক ঠিক জায়গায় সেভাইে অনন্তকাল থেকে যাবে। সে অনেকদূর যেতে চিন্তায়, চেতনায়- চলনে করণে আমরা কে কতটুক প্রস্তুত?

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com