বিশেষ প্রতিনিধি ::
তাহিরপুর সীমান্তের ভারতের ঘোমাঘাট পাহাড়ি এলাকার নিম্নবর্তী লাউড়েরগড়ে শত বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শাহ আরেফিন (র.)-এর ওরস। সারাদেশ থেকে মুসলমান সম্প্রদায়ের ভক্তবৃন্দসহ ভিন্ন ধর্মাবলম্বিরাও দলে দলে আসেন এখানে। সমাগম ঘটে লাখো মানুষের। প্রায় দেড় সহ¯্রাধিক দোকান বসে নানা পণ্য নিয়ে। রাতভর গান ভাজনা, সাধন-ভজনের পাশাপাশি মনোবাসনা পূরণের জন্য ভক্তবৃন্দ শাহ আরেফিনের আস্তানায় নগদ টাকা, গরু, খাসি, পাটা, মোরগসহ বিভিন্ন মানত উপকরণ দিয়ে থাকেন। স্থানীয়রা জানান, ভক্তবৃন্দের কাছ থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা ওরস উপলক্ষে আসে। গত রোববার শুরু হওয়া ওরস শেষ হবে মঙ্গলবার। ওরস উপলক্ষে এলাকায় প্রায় এক সপ্তাহ উৎসবের আমেজ থাকে। তবে দানের টাকা প্রতি বছরই নয়ছয় হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, প্রতি বছর অনুদান হিসেবে মোটা অংকের টাকা অনুদান হিসেবে আসলেও এতদিন ধরে আস্তানার কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। যেসব স্থাপনা দেখা যায় তা মূলত স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের করা। প্রতি বছর ওরস উপলক্ষে বিশাল অংকের টাকা কোথায় যায় কিভাবে ব্যয় হয় তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। শাহ আরেফিন আস্তানা পরিচালনা কমিটিও কখনো এ বিষয়ে কথা বলেনি।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৭৫ সন থেকে বড় পরিসরে ওরস অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ওই সময় থেকে অনুদানের টাকাও বাড়ছে। তাছাড়া ওরস উপলক্ষে আসা সহ¯্রাধিক দোকান থেকেও নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা আদায় করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত রোববার রাত থেকে শুরু হওয়া ওরসে এসে ভক্তবৃন্দ আস্তানায় নগদ টাকা ছড়িয়ে দেন। ভেতরে কমিটি নিয়োজিত খাদেমরা এই টাকা সাথে সাথে আস্তানায় থাকা বিশাল স্টিলের ট্রাংকে ভরে রাখেন। রোববার রাতে ভক্তদের টাকায় ট্রাংক ভরে গেলে আয়োজক কমিটি বরাবরের মতো বস্তা ভরে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। এ খবর পেয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ভূমি সহকারি কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে ট্রাংকটি তালাবদ্ধ করে অনুদানের টাকা না সরানোর নির্দেশনা দেন। এতে বেকে বসে ওরস উদ্যাপন কমিটি। তাদের বাধার ফলে প্রশাসন টাকাভর্তি ট্রাংকে তালা না দিলেও টাকা যাতে অন্যান্য বছরের মতো খোয়া না যায় সেই নির্দেশনা দিয়ে আসে। এই ঘটনা প্রথমবারের মতো ঘটেছে বলে জানান, খোদ আয়োজক কমিটি।
এ বিষয়ে ওরস উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলম সাব্বির বলেন, নিরাপত্তার কারণে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাজারের টাকা ভর্তি ট্রাংক তালাবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। আমরা তাকে বুঝিয়েছি আমাদের শতাধিক নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে। কখনো নিরাপত্তার অভাব হয়নি। এবারও কোন সমস্যা হবেনা। পরে আর প্রশাসনের লোকজন তালা মারেনি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মাজারে প্রতি বছর ওরস উপলক্ষে লাখ লাখ টাকা অনুদান আসে। এই টাকা যাতে কোনভাবে এবার থেকে ‘মিসইউজড’ না হয় সেজন্য আমি নজরদারি রাখছি। কারণ এই টাকা নানাভাবে অপব্যয় হয় বলে শোনেছি।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, প্রতি বছর ওরস উপলক্ষে প্রায় ২০ লাখ টাকা প্রদান করেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শাহ আরেফিন ভক্তবৃন্দ। এবারও সমপরিমাণ টাকা উত্তোলন হবে। এছাড়াও প্রতিদিনই মাজারে মানত নিয়ে আসা লোকজন নগদ টাকা পয়সা ও মানত উপকরণ দিয়ে যান।