সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেশের ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিককে ২০১৭ সালের একুশে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২০ ফেব্রুয়ারি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে একুশে পদক দেবেন। এবারের একুশে পদক পাচ্ছেন সুনামগঞ্জের প্রবীণ লোকসংগীত শিল্পী সুষমা দাস। এর আগে একই বিভাগে একুশ পদক লাভ করেন সুষমার অনুজ প-িত রাম কানাই দাশ। রামকানাই ২০১৪ সালে একুশে পদক পান।
এ বছর পদকের জন্য মনোনীত বিশিষ্ট নাগরিকেরা হলেন- ভাষা আন্দোলনের জন্য ভাষাসৈনিক অধ্যাপক শরিফা খাতুন, শিল্পকলায় (সংগীত) সুষমা দাস, জুলহাস উদ্দিন আহমেদ, ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম, শিল্পকলায় (চলচ্চিত্র) তানভীর মোকাম্মেল, শিল্পকলায় (ভাস্কর্যে) সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ, শিল্পকলায় (নাটক) সারা যাকের, সাংবাদিকতায় আবুল মোমেন ও স্বদেশ রায়, গবেষণায় সৈয়দ আকরম হোসেন, শিক্ষায় প্রফেসর ইমেরিটাস আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, সমাজসেবায় অধ্যাপক মাহমুদ হাসান, ভাষা ও সাহিত্যে (মরণোত্তর) কবি ওমর আলী, ভাষা ও সাহিত্যে সুকুমার বড়ুয়া, শিল্পকলায় (নৃত্য) শামীম আরা নিপা এবং শিল্পকলায় (সংগীত) রহমত উল্লাহ আল মাহমুদ সেলিম।
সুষমা দাস ১ মে ১৯৩০ (১৩৩৬ বাংলা) সালে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা থানার পুটকা গ্রামে স্বনামধন্য সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রসিক লাল দাশ ও মা দিব্যময়ি দাশ। বাবা-মা দুজনই গান লিখতেন এবং গাইতেন। তিনি বাবা-মার সাথে মাত্র ৭ বছর বয়সে ছোট বেলা থেকেই ধামাইল এবং বাউল গান করতেন।
১৩৫২ সালে শাল্লা থানার চাকুয়া গ্রামে তাঁর বিয়ে প্রাণনাথ দাসের সাথে। বিয়ের পর গ্রামীণ মেয়েলী আসরে ধামাইল, কবি গান ও বাউল গানের পাশাপাশি হরি জাগরণের গান, গোপিনী কীর্তন, বিয়ের গান সহ ভাটি অঞ্চলে প্রচলিত লোকজ ধারার সকল অঙ্গের গান গেয়ে এলাকায় একজন নন্দিত শিল্পী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। জীবনের দীর্ঘকাল নিজ গ্রামেই কেটেছে সুষমা দাসের।
১৯৭২ সালে ছোটভাই প-িত রামকানাই দাশ এই গুণী সংগীতশিল্পীকে সিলেটে নিয়ে আসেন। ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় তিনি সিলেট বেতারে অডিশন দেন এবং নিয়মিত সংগীতশিল্পী হিসেবে লোকসংগীত পরিবেশন করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠান মঞ্চে গান করারও সুযোগ সৃষ্টি হয় তাঁর। বর্ষবরণ, বসন্ত উৎসবসহ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন তিনি। বাংলাদেশ বেতারে তিনি প্রায় সহস্রাধিক গান পরিবেশন করেন।
জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি বেগম সুফিয়া কামালের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় রবীন্দ্র সম্মেলনের অষ্টম বার্ষিক অনুষ্ঠান মালায় লোকগীতি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে রাধারমণের গান পরিবেশন করেন সুষমা দাস।
ঢাকার শিল্পকলা কর্তৃক আয়োজিত “লোকসঙ্গীত উৎসব” অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন তিনি এবং ২০১১ সালের ১৬ মার্চ ছায়ানট কর্তৃক আয়োজিত ওয়াহিদুল হক স্মারক “দেশঘরের গান” অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন ছাড়াও অনুষ্ঠানে তিনি পিতা রসিক লাল দাশ ও রাধারমণ দত্তের গান পরিবেশন করেন।
সুষমা দাস রাধা-রমন দত্তের গান, বাউল শাহ আবদুল করিমের গান, কালাশাহ, দুর্বিন শাহ, গীতিকবি গিয়াস উদ্দিন আহমদ, হাসন রাজা সহ বহু মরমি কবি ও সাধকের গান গেয়ে থাকেন।
১৪১৭ বাংলায় ভারতের কলকাতায় “বাউল ফকির উৎসব” এবং পরবর্তীতে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের আহ্বানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন সুষমা দাশ। সেই মঞ্চে দর্শকের অনুরোধে রাধারমণের গান পরিবেশন করেন তিনি।
তিনি চার পুত্র ও এক কন্যার জননী সুষমা। বর্তমানে তিনি সিলেট নগরীর আখালিয়া হালদার পাড়া, মজুমদারপল্লী, ১০নং ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।