সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
‘দানবীর’ রাগীব আলীর দখল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সিলেটের তারাপুর চা বাগান। রোববার সকালে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। বাগানটি উদ্ধার করে দেবোত্তোর স¤পত্তির সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
তবে রোববারের অভিযানে কেবল চা বাগান ও চা বাগান সংশ্লিষ্ট স্থপনা উদ্ধার করা হয়। বাগান ধ্বংস করে গড়ে উঠা অন্যান্য স্থাপনা অপসারণের জন্য ছয় মাসের সময় বেধে দিয়েছে প্রশাসন।
এই চা বাগান দখল করে রাগীব আলী নিজের নামে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনসহ ৩৩৭টি প্লট তৈরি করে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এসব প্লটে গড়ে উঠেছে বহুতল আবাসন ও বিপণি বিতান।
অভিযান পরিচালনাকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মোশারফ হোসেন জানান, উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে এই অভিযান চালানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশে সেবায়েতকে বাগানের দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই দেবোত্তোর স¤পত্তির সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত গণমাধ্যমকে বলেন, ৪২২.৯৬ একর ভূমির বাগানের মধ্যে আমাকে ৩২৩ একর ভূমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার প্রথম কাজ হবে দেবোত্তোর স¤পত্তি এই বাগানের মধ্যে দেবতার প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করা। দখলদাররা বাগানকে দেবতার প্রতিমা সরিয়ে ফেলেছিল।
বাগান পরিদর্শন শেষে দুপুর দুইটায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তাকে লিখিতখভাবে বাগানের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান পঙ্কজ।
পঙ্কজ এই স¤পত্তির সেবায়েত রাজেন্দ্র গুপ্তের ছেলে। রাজেন্দ্র একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। রাজেন্দ্র গুপ্তের বাবা বৈকুণ্ঠ চন্দ্র গুপ্ত তারাপুর চা বাগানটি দেবতার নামে দান করেন। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা মূল্যের তারাপুর চা বাগান দীর্ঘদিন ধরে শিল্পপতি রাগীব আলীর দখলে ছিল। গত ১৯ জানুয়ারি উচ্চ আদালত রাগীব আলী প্রতারণামূলকভাবে বাগান দখল করেছেন উল্লেখ করে তা উদ্ধারে নির্দেশ দেন।
এই আদেশের প্রেক্ষিতে সিলেটের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে রোববার সকাল ১১টায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিয়ে উদ্ধার অভিযানে যান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. মাহবুবুর রহমান।
এসময় রাগীব আলীর আইনজীবী বন্ধু গোপাল দাস ও গোলাম সোবহান চৌধুরী দিপন সময় প্রার্থনা করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তা নাকচ করে দেন।
আদালতের রায় থেকে জানা যায়, চা-বাগানে গড়ে তোলা আবাসিক প্রকল্প এবং স¤পত্তির ব্যবহার স¤পূর্ণভাবে অবৈধ, এ বাগানকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়াসহ ১৭টি নির্দেশ দেয়া হয়।
তারাপুর চা বাগানে নির্মিত সব অবকাঠামো ৬ মাসের মধ্যে অপসারণ করে সে জায়গায় চা বাগান করার আদেশ দেওয়া হয় এই রায়ে। রিট আবেদনকারীরা তা করতে ব্যর্থ হলে পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের সহায়তা নিয়ে স্থাপনা অপসারণের কথাও উল্লেখ করা হয় রায়ে। তবে এ খাতে ব্যয় হওয়া অর্থ জেলা প্রশাসক রিট আবেদনকারীদের কাছ থেকে গ্রহণ করবেন বলেও উল্লেখ করা হয়।