রাজন চন্দ ::
আগামী ৪ জুন তাহিরপুর উপজেলার ৭ ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রধান দু’দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। পিছিয়ে নেই মনোনয়নবঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থীরাও।
দলীয় সূত্র জানায়, আ.লীগ ও বিএনপি প্রতিটি ইউনিয়নে তাদের একক প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের রুখতে পারছে না। বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে বেকায়দায় পড়েছেন দলীয় প্রার্থীরা। সাধারণ ভোটারদের ধারণা, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নেই বিদ্রোহীরা দলীয় প্রার্থীদের সাথে পাল্লা দিয়ে লড়বেন। সঙ্গত কারণেই বিদ্রোহী প্রার্থীদের মোকাবেলায় হিশশিম খাবেন দলীয় প্রার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলার ৭ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৫০ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল শেষে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। তাঁরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোটপ্রার্থনা করছেন।
এদিকে, বিদ্রোহীরাই আ.লীগ-বিএনপি’র দলীয় প্রার্থীদের বড় বাধা বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। মনোনয়নবঞ্চিত হলেও বিদ্রোহীদের মনোবল ভাঙ্গেনি; বরং তাঁরা পুরোদমে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। বিদ্রোহী প্রার্থিতার কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষাভাবে বিদ্রোহীদের বিজয়ী করতে কাজ করছেন।
আ.লীগ দলীয় সূত্র জানায়, তাহিরপুর সদর ইউনিয়নে মোতাহার হোসেন আখঞ্জি শামীম দলীয় প্রতীক নৌকা পেলেও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন তালুকদার, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক স্বপন কুমার দাশ ও সাবেক যুবলীগ আহ্বায়ক হাফিজ উদ্দিন। বালিজুরী ইউপিতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আতাউর রহমান দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এই ইউনিয়নে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য হাজী আব্দুল জহুর তালুকদার। বাদাঘাট ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন। এই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন যুবলীগ নেতা আফতাব উদ্দিন ও মোর্শেদ আলম। উত্তর শ্রীপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজী আবুল হোসেন খাঁন। তার বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আমীর আলী ও জয়দর আলী। উত্তর বড়দল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন নৌকা প্রতীক পেলেও বিদ্রোহী হয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুক মিয়া। দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক হাজী ইউনুছ মিয়া দলীয় মনোনয়ন নৌকা পেলেও বিদ্রোহী হয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি ছাত্তার মিয়া। দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নে উপজেলা যুবলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক বিশ^জিৎ সরকার দলীয় প্রতীক নৌকা পেলেও বিদ্রোহী হয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক কয়েছ মিয়া।
বিএনপি’র দলীয় সূত্র জানায়, বালিজুরী ইউনিয়নে উপজেলা শ্রমিকদল আহ্বায়ক ফেরদৌস আলম বিএনপি’র মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁর বিপরীতে বিদ্রোহী হয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন। দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপি’র সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আজাহার আলী দলীয় মনোনয়ন ধানের শীষ পেলেও বিদ্রোহী হয়েছেন বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ, সবুজ আলম, ইলিয়াস আলী, বোরহান উদ্দিন, আব্দুস সালাম। দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নে বিএনপি নেতা আলী আহমদ মোরাদ দলীয় প্রতীক ধানের শীষ পেয়েছেন। বিদ্রোহী হয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি শামীম আহমেদ।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোতাহের হোসেন আখঞ্জি শামীম বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার পূর্বে কমিটমেন্ট ছিল, যে দলীয় প্রতীক নিয়ে আসবেন তার সাথে সবাই কাজ করবো। বর্তমানে যারা বিদ্রোহী হয়েছে তাঁরাও একই কথা বলেছিলেন, কিন্তু তাঁরা কথা রাখেননি।
দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়ন বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সবুজ আলম বলেন, দল আমাকে মূল্যায়ন না করলেও এলাকার সাধারণ জনগণের দাবির মুখে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।
তাহিরপুর উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বলেন, প্রার্থীতা এখনো চূড়ান্ত হয়নি প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে পরবর্তীতে দলীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সিনিয়র সহ-সভাপতি আলী মর্তূজা বলেন, আমরা দলের পক্ষ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনুরোধ জানাবো নির্বাচন না করার জন্য। তারপরেও যদি কেউ নির্বাচন করে তাহলে এ ব্যাপারে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।