গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি শিরোনাম ছিলÑ “ধর্মপাশায় মাঠ দিবস।” খবরে প্রকাশ ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের হালিয়াকান্দা গ্রামে এটি সম্পন্ন হয়। সেখানে মূলত ধর্মপাশা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে ‘কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার’ (ধান কাটার ও মাড়াই করার যন্ত্র) দিয়ে ধান কাটার ও এতদসংক্রান্ত প্রদর্শনীর সঙ্গে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যেখানে ধান প্রতিবছর বলতে গেলে সর্বাংশ শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, অকাল বন্যা, ফসলরক্ষাবাঁধের ভাঙন ইত্যাদি প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেখানে এইরূপ মাঠ দিবস কিংবা ‘কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার’ যন্ত্রের প্রদর্শনীর তাৎপর্য বা ফলপ্রসূতা কী? সেটা একেবারেই বোধগম্য হচ্ছে না কৃষকের ও আমজনতার।
প্রকৃতপ্রস্তাবে যেখানে ফসল ফলে প্রচুর পরিমাণে, কিন্তু সে ফসল কাটা সম্ভব হয় না, সেখানে ফসল কাটার যন্ত্রের প্রদর্শনী ও সেটা নিয়ে মাঠ দিবস করার কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে? এবার যে ফসল কাটার যন্ত্রটা কৃষককে দেখানো হবে, কী করে সেটা কাজ করে, কী করে ব্যবহার করা যায় হয় তো বা তাঁকে শেখানো হবে, কিন্তু আসছে বছর তিনি সেটা তার ফলানো ফসল কাটার কাজে ব্যবহার করতে হয় তো পারবেন না, ব্যবহার করার সময় আসার আগেই তাঁর ফসল পানির তলে তালিয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা আছে। এমন অনিশ্চয়তার মুখে এইসব সরকারি আয়োজন অনুষ্ঠান কি একদম নিরর্থক নয়? কেউ যদি ভাবে এমন আয়োজন একধরনের অর্থ ও শ্রমের অপচয় ভিন্ন আর কীছুই নয়, তাকে কি দোষ দেওয়া যাবে? এরচেয়ে তো আগামী বৎসরে ক্ষেতের ফসল কী করে রক্ষা করা যায় বা যাবে সে বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করে কৃষকদের সম্পৃক্ত করে অনুষ্ঠানের আয়োজন ও কর্মপ্রয়াস পরিচালনা অধিকতর উত্তম।
এ বিষয়ে সাধারণ্যে একটা অভিমত অতিসম্প্রতি গড়ে উঠেছে। তাঁরা মনে করেন, আগে কৃষকের ফসলহানি না ঘটার বিষয়টি নিশ্চিত হোক, সরকারি মহলের বা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে, কেবল তারপরই এইরূপ ‘কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার’ দিয়ে ফসল কাটার স্বপ্ন কৃষককে দেখানো অধিকতর সমীচীন হবে। অন্যথায় আগামী বৎসরে এই ‘কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার’ যন্ত্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কৃষকের চোখের সামনে একটি মূর্তিমান প্রহসন হিসেবে প্রদর্শিত হতে থাকবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এইসব আয়োজন কি আসলে কৃষকের সঙ্গে প্রহসনের আয়োজন নয়?