স্টাফ রিপোর্টার ::
জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র মনোনয়ন নিয়ে নানা অনিয়ম ও নাটকীয়তায় স্তব্ধ হয়ে গেছেন দুই দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ‘ধোঁকা’ দিয়ে বিএনপিতে উপজেলার জনৈক প্রভাবশালী নেতা তার নিকটাত্মীয়কে মনোনয়ন দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগে দলীয় মনোনয়ন পাবার পরও সাধন চন্দ্র তালুকদারের বদলে করুণা সিন্ধু তালুকদারকে মনোনয়ন দেওয়ায় হতাশ হয়েছেন তাঁর কর্মী ও সমর্থকরা।
ওই ইউনিয়নে করুণা সিন্ধু তালুকদারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত সাধন চন্দ্র তালুকদারসহ চার প্রার্থী বিদ্রোহী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাছাড়া বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. জুলফিকার চৌধুরী রানাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইফতেখার চৌধুরী নামের আরেক নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এই দুই ইউনিয়নে বিদ্রোহীদের কারণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের চরম বেগ পেতে হবে বলে নির্বাচনী বিশ্লেষকরা মনে করেন।
বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেনারবাঁক ইউনিয়নে প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে তৃণমূল নেতাকর্মীরা জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন বাবলুকে সমর্থন দেন। এসময় উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ইউনিয়ন কমিটির ১০জন দায়িত্বশীল নেতাদের ধোঁকা দিয়ে একাধিক প্রার্থী কেন্দ্রীয় নির্দেশে পাঠাতে হবে বলে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে আসেন। পরে ওই জালিয়াতির স্বাক্ষরকে ব্যবহার করেই উপজেলা কমিটি আজাদ হোসেন বাবলুকে বাদ দিয়ে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতির নিকটাত্মীয় মো. জুলফিকার চৌধুরী রানা’র একক নাম পাঠায়। এ ঘটনায় তৃণমূল নেতারা বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতাদেরও বিষয়টি অভিযোগ করেছে। নেতাকর্মীদের অভিযোগ গত সংসদ নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কাজ করেছেন দলীয় মনোনীত প্রার্থী জুলফিকার চৌধুরী রানা।
ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত আজাদ হোসেন বাবলু বলেন, ইউনিয়নের দায়িত্বশীল তৃণমূল নেতাদের স্বাক্ষর নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি তাঁর নিকটাত্মীয়কে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে নেতাকর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থীকে মাঠে নামিয়েছেন। তাছাড়া যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি গত সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নিয়ে শেষ মুহূর্তে নানা নাটকীয়তা হয়। প্রার্থী মনোনীত হবার পর হঠাৎ পাল্টে যায় তাঁর নাম। দলীয় প্রার্থীর বদলে আরেকজনকে প্রার্থী করায় দোটানায় পড়ে যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। জানা গেছে, সাধন চন্দ্র তালুকদারের বদলে করুণা সিন্ধু তালুকদারকে শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ায় ইউনিয়নে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে প্রকাশ্যে বিদ্রোহী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন।
জানা গেছে, শেষ মুহূর্তে মনোনয়নবঞ্চিত সাধন চন্দ্র তালুকদার, বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান এবং ইউপি সদস্য নূর মিয়া এবং যুবলীগ নেতা আব্দুল লতিফ নাজেল বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে তারা চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকা। বিদ্রোহীঘেরা আওয়ামী লীগ প্রার্থী করুণাসিন্ধু এখন বিপাকে পড়েছেন বলে জানা গেছে।
জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তৃণমূল নেতাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ফেনারবাঁক ইউনিয়নে প্রার্থীর নাম দেওয়া হয়েছে বলে আমি কোন অভিযোগ পাইনি। মনোনীত প্রার্থী এর আগে দলের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন কি না তা খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন বলেন, দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাধন চন্দ্র তালুকদারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে দলীয় সিদ্ধান্তেই মনোনয়ন বোর্ড করুণা সিন্ধু তালুকদারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য তিনি নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান।