“রাজনীতির নামে ক্ষমতাশালী দলগুলো ছাত্রদের ব্যবহার করছে।” উক্তিটি একজন ছাত্রনেতার। তিনি দৈনিক সুনামকণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। কথা হলো, এই কথাটা কেবল তাঁর একার কথা নয়, দেশের সকল বিবেকবান সচেতন মানুষের কথা। রাজনীতিতে কেবল শিক্ষার্থীকে ব্যবহার করা হয় না, সর্বস্তরের ও শ্রেণির মানুষকে ব্যবহার করা হয়। ব্যবহার কথা হয় প্রতিটি প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞানকে, এমন কি ধর্মকেও। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনীতির স্বার্থে, বলতে গেলে, বেশি মাত্রায় ব্যবহার করা হয়েছে ধর্মকে। পাকিস্তান আমলে পূর্বপাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণে রেখে সর্বোচ্চ মাত্রায় শাসন-শোষণ করার লক্ষ্যে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে মানবতাবাদী ও মানুষের সমঅধিকার প্রদানে অগ্রণী ধর্ম ইসলামকে।
বর্তমানে প্রচলিত রাজনীতি এতটাই খতরনাক হয়ে উঠেছে যে, রাজনীতি করাটা বলতে গেলে অপরাধের পর্যায়ে বিবেচিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। দৈনিক সুনামকণ্ঠে যখন ছাপা হয় “দিরাইয়ে মনোনয়ন বাণিজ্যের বলি ৬ চেয়ারম্যান” তখন কেউ যদি রাজনীতিকে বাজারের সঙ্গে তুলনা করে তাকে দোষারোপ করা যাবে কি? বাজারে প্রয়োজনীয় সব কিছু বিক্রি করা হয় একটি তুল্যাঙ্কের বিনিময়ে, যে তুল্যাঙ্ককে অর্থনীতির ভাষায় বিনিময়মূল্য বলে, বাংলাদেশে লোকে বলে টাকা। যেখানে একজন রূপোপজীবিনীও পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। দেশ-রাষ্ট্র-সমাজ পরিচালকরা সেখানে পসরা করে তোলেছেন রাজনীতিকে।
প্রকৃতপ্রস্তাবে রাজনীতি হল একটি বিজ্ঞান। যেহেতু বর্তমান সমাজ একটি শ্রেণিবিভক্ত ব্যবস্থা, সে জন্য রাজনীতি বিজ্ঞান এখানে নিরপেক্ষ বিজ্ঞান হিসেবে কার্যকর নয়। এটি অধিপতি শ্রেণির হাতে অধঃস্থন শ্রেণিকে শাসন-শোষণের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনে রাজনীতিকে দামি পণ্য করে তোলতে পিছপা হচ্ছে না।
সাধারণ মানুষের উচিত রাজনীতি নামক এই অস্ত্রটির এইরূপ প্রতিক্রিয়াশীল ব্যবহারকে প্রতিরোধ করার সংগ্রামে ব্রতী হওয়া। যারা রাজনীতিকে বাজার ব্যবস্থার পণ্য করে তোলে ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’ ফেদে বসেছে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করার এখনই সময়। প্রত্যাখ্যান করতে হবে এ জন্যে যে, তারা রাজনীতিকে নিজের স্বার্থ উদ্ধারে হাতিয়ারে পরিণত করেছে।
আমরা মনে করি এইভাবে রাজনীতিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করার অর্থ হলো রাজনীতিকে ও রাজনীতিক দলকে জনবিচ্ছিন্ন ও জনসাধারণের কাছে অপ্রিয় করে তোলার একটি অপপ্রয়াস মাত্র। এর ফল প্রচলিত রাজনীতির জন্য কখনও শুভ হয় না। মনে রাখতে হবে, এ দেশে অন্তত সাধারণ মানুষের হাতে ভোটাধিকারটা আছে, এই অস্ত্রটি তারা অপ্রিয় পাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতেই পারেন। এবং তার উদাহরণও একেবারে নেই যে এমন নয়। আসলে নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য যে কোনও রাজনীতিক দলের জন্য জনবিচ্ছিন্নতা তৈরির একটি চমৎকার উপায়, সেই সাথে একটি ফাঁদও বটে।