সামছুল ইসলাম সরদার ::
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দিরাই উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৬টিতেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র দলীয় প্রার্থীরা বেকায়দায় পড়েছেন। দু’দলের স্থানীয় অনেক নেতাকর্মীই দলীয় প্রার্থীর সঙ্গ ছেড়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জগদল ও ভাটিপাড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আব্দুস সালাম ও শাহজাহান কাজীর নাম কেন্দ্রে জমা দেন। কিন্তু কেন্দ্র থেকে ওই দুই ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পান হুমায়ুন রশীদ লাভলু ও জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে পাশ কাটিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান ওই ইউনিয়নে তার পছন্দের দুই প্রার্থীর মনোনয়ন বাগিয়ে আনেন। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। মনোনয়নপত্র জমা দানের দিন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থী শিবলী আহমদ বেগ ও শাহজাহান কাজী পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার শিবলী আহমদ বেগ-এর পক্ষে দিরাই পৌরসভার মেয়র, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক মোশাররফ মিয়া ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম, আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান, জিল্লুর রহমানসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগ পথসভা করেন।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমান বলেন, দিরাই-শাল্লা হচ্ছে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ঘাঁটি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে পাশ কাটিয়ে দিরাই-শাল্লার রাজনীতি কল্পনা করাই যায় না। আমরা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। কেউ উড়ে এসে আমাদের নেতার উপর মাতব্বরী করবেন তা মানা যায় না। মনোনয়ন বাণিজ্য করে দলীয় প্রার্থী দেয়া হবে সেটা দিরাই-শাল্লার আওয়ামী লীগ মেনে নিবে না।
অপরদিকে, কুলঞ্জ ইউনিয়ন ও সরমঙ্গল ইউনিয়নের বিএনপি’র স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন।
কুলঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ স¤পাদক আলাউর রহমান বলেন, ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে প্রবাসী এমন একব্যক্তিকে ধানেরশীষ দেওয়া হয়েছে। যার সাথে রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সখ্যতা। তাই আমরা ওই আওয়ামী লীগঘেঁষা প্রবাসী ব্যক্তিকে মেনে নিতে পারিনি। আমরা বিএনপি পরিবারের লোক সাবেক ছাত্রনেতা মিসবাউজ্জামান চৌধুরী’র পক্ষে কাজ করছি।
সরমঙ্গল ইউনিয়ন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ স¤পাদক বাবুল হোসেন বলেন, আমাদের ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যানসহ অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে উপজেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতির হাতের ধানেরশীষ তুলে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি কোনোভাবে মানা যায় না। আমরা বর্তমান চেয়ারম্যান এহসান চৌধুরীর পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।
উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র একাধিক দায়িত্বশীল নেতারা ক্ষোভের সাথে বলেন, দু’দলেই ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে ‘মনোনয়ন বাণিজ্যে’র মাধ্যমে জনবিছিন্ন লোকদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যার কারণে দু’দলের নেতাকর্মীরাই বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। রফিনগর ও তাড়ল ইউনিয়নে দু’দলের একই অবস্থা।