সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদন্ড পাওয়া নিজামী আপিল বিভাগে তার রিভিউ খারিজের বিষয়টি শুনেছেন। গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দি অবস্থায় তিনি রেডিওর মাধ্যমে এ খবর পান বলে জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ। এর আগে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের দেয়া নিজামীর মৃত্যুদন্ডাদেশের ব্যাপারে রিভিউ করেন নিজামীর আইনজীবীরা।
কারাগার সূত্র জানায়, নিজামীর রিভিউর রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সকালেই কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আগত দর্শনার্থীদের তল্লাশী করে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। আপিল বিভাগে নিজামীর রিভিউ খারিজের পর দুপুরে তিনি রেডিওর মাধ্যমে তার মৃত্যুদন্ডাদেশ বহালের খবর জানতে পারেন। এসময় তাকে বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল বলে জানান কারাগারের এক কর্মকর্তা। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর থেকেই নিজামী কাশিমপুর কারাগারের পার্ট-২ এর ৪০নং কনডেম সেলে বন্দি।
বৃহস্পতিবার সকালে নিজামীর করা রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজ করে রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। সর্বোচ্চ আদালতের সর্বশেষ এ রায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হলো মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর সর্বোচ্চ নেতা নিজামীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আইনি লড়াই।
সর্বশেষ ধাপে এখন কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন তিনি। প্রাণভিক্ষা না চাইলে বা চাওয়ার পর আবেদন নাকচ হলে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না। আইন অনুসারে তখন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেকোনো সময় নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকর করতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে গত ৬ জানুয়ারি নিজামীর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত রায় দেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির একই আপিল বেঞ্চ। গত ১৫ মার্চ আপিল মামলাটির ১৫৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সর্বোচ্চ আদালত। রায়টি রাতেই বিচারিক আদালতে গেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-১। এরপর পরই মৃত্যু পরোয়ানাসহ পূর্ণাঙ্গ রায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরদিন ১৬ মার্চ সকালে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এর কনডেম সেলে থাকা নিজামীকে মৃত্যু পরোয়ানা ও পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনানো হয়।
নিজামীকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড এবং হত্যা-গণহত্যা ও ধর্ষণসহ আটটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে চারটিতে ফাঁসি ও চারটিতে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে তিনটিতে ফাঁসি ও দু’টিতে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। অন্য তিনটিতে চূড়ান্ত রায়ে দন্ড থেকে খালাস পেয়েছেন নিজামী, যার মধ্যে একটিতে ফাঁসি ও দুটিতে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ ছিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে।