সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
শিল্পকলার নানা শাখায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৩ সাল থেকে প্রবর্তন করা হয়েছে শিল্পকলা পদক। তারপর থেকেই প্রতি বছর ৭ গুণী ব্যক্তিত্বকে এই পদকে ভূষিত করা হয়। ধারাবাহিকতায় এবার তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত হচ্ছে এই পদক প্রদান অনুষ্ঠান।
এ উপলক্ষে বিস্তারিত জানাতে মঙ্গলবার রাজধানীস্থ সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয় এক সাংবাদিক সম্মেলনের। সেখানে জানানো হয় এবারে যন্ত্র সংগীতে আজীবন নিজেকে নিয়োজিত রেখে এর উন্নয়ন, প্রসার ও প্রচারে ভূমিকা রাখায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক ও বরেণ্য সংগীত পরিচালক এবং সিলেটের কৃতী সন্তান সুজেয় শ্যামকে শিল্পকলা পদক প্রদান করা হচ্ছে।
এছাড়াও ‘শিল্পকলা পদক-২০১৫’ পাচ্ছেন নৃত্যকলায় সালেহা চৌধুরী, লোকসংস্কৃতিতে নাদিরা বেগম, নাট্যকলায় কাজী বোরহানউদ্দীন, আবৃত্তিতে নিখিল সেন, চারুকলায় সৈয়দ আবুল বারক আলভী, কণ্ঠসংগীতে মিহির কুমার নন্দী। পদকপ্রাপ্তদের সম্মাননা স্বরূপ দেয়া হবে এক লক্ষ টাকা, গোল্ড মেডেল, উত্তরীয় এবং ফুলের শুভেচ্ছা। আগামী বৃহ¯পতিবার, ৫ মে বিকেল ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিতদের হাতে পদক তুলে দেবেন।
প্রসঙ্গত, সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যামের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে। পিতা অমরেন্দ্র চন্দ্র শ্যাম ছিলেন দি এইডেড স্কুলের শিক্ষক এবং মাতা শান্তিসুধা শ্যাম। বাড়িতে গান বাজনার পরিবেশেই বেড়ে উঠেছেন সুজেয় শ্যাম। জেঠা মশাই নরেশ চন্দ্র শ্যাম কীর্ত্তন বাউল গানের খুব অনুরাগী ছিলেন। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সংগীতের সাথেই চির জীবনের জন্য গেঁথে গেলেন সুজেয় শ্যাম। সংগীতের সাথে সখ্যতা করতে করতেই ১৯৬৪ সালে তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানের চট্টগ্রাম রেডিওতে যোগদান করেন একজন গিটার বাদক ও ছোটদের গানের পরিচালক হিসেবে। এক সময় বড়দের অনুষ্ঠানেও সংগীত পরিচালনা শুরু করেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে সুজেয় শ্যাম চট্টগ্রাম রেডিও’র চাকরি ছেড়ে ঢাকা রেডিওতে যোগদান করেন। ২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রিন্সিপাল মিউজিক প্রডিউসার পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন টুনাটুনি অডিও প্রতিষ্ঠানের সাথে সংগীত পরিচালক হিসেবে। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় অনেক দেশাত্মবোধক গানে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন তিনি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। সেই সময় তিনি সংগীত-পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন ‘স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে’। তার অনেক জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গান তখন মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছিল শত্রুদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে।
‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘মুক্তির এই পথ সংগ্রাম’, ‘ওরে শোনরে তোরা শোন’, ‘আহা ধন্য আমার’, ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’-সহ অনেক উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী দেশাত্মবোধক গানে সুর করেছেন তিনি।
পারিবারিক জীবনে সুজেয় শ্যাম এক কন্যা সন্তানের জনক।
পদক প্রাপ্তির খবরে আনন্দ প্রকাশ করেছেন সংগীতজ্ঞ সুজেয় শ্যাম। তিনি বলেন, ‘শিল্পকলায় কতোটা অবদান রাখতে পেরেছি সেটা জানিনা, তবে সংগীতকে একটা কাঠামো দেয়ার চেষ্টা করছি সবসময়। স্বাধীনতার যুদ্ধে যখন সবকিছুতেই হায়েনাদের শাসন, তখনও গান করেছি মানুষের জন্য, দেশ ও মায়ের জন্য। আজ এই স্বীকৃতি অনেক অভিমানকে হালকা করেছে। দোয়া করবেন, যতদিন বাঁচি আজীবন যেন গানের সঙ্গেই বেঁচে থাকতে পারি।’