স্টাফ রিপোর্টার ::
পৃথক ঘটনায় সুনামগঞ্জ জেলায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায়ই ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। খেলতে গিয়ে ডোবায় পড়ে মারা গেছে দুই ভাই-বোনসহ তিন শিশু।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা জানান, রোববার দুপুরে বাড়ির লোকদের অগোচরে শাবানা বেগমের দ্বিতীয় শ্রেণি পড়–য়া কন্যা হালিমা আক্তার (৯), তার ছোট ভাই সাজিদ আহমদ (৬) এবং প্রতিবেশী জাহির মিয়ার ছেলে গ্রামের আনন্দস্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণি পড়–য়া সাজেদ মিয়া (১০) ডোবার পানিতে খেলতে নামে। পরিবার ও এলাকাবাসীর ধারণা এই তিনজনের কোন একজন খেলতে গিয়ে ডোবার পানিতে ডুবে গেলে দুইজন তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে তিন জনই ডুবে মারা যায়। পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে তাদের খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে রোববার সন্ধ্যায় পুকুরে এসে দেখেন তিন জনের লাশ ভেসে উঠছে। স্বজনরা একে একে তিনজনের লাশ ভেসে থাকতে দেখে মুষড়ে পড়েন। কান্নার রোল উঠে বাড়িতে।
জানা গেছে, শাবানা বেগমের স্বামী তজিবুর রহমান মধ্যপ্রাচ্যে থাকেন। ফোনে প্রায় প্রতিদিনই তার ছোট ছোট সাত সন্তানের খবর নিতেন। ওইদিন সকালেও প্রিয় সন্তানদের খোঁজ নিয়েছেন তিনি। তজিবুর রহমানের আরো তিন সন্তান দামোধরতপি সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। পুকুরে ডুবে মারা যাওয়া সাজিদসহ আরও এক শিশু সন্তান এখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি। রোববার সকালে হালিমার সঙ্গেও কথা বলেছেন তজিবুর। নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার কথা বলেছিলেন মেয়েকে।
একই উপজেলার জয়কলস নামক স্থানে বাসচাপায় দিলারা বিবি (৬০) নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা রোববার বিকেলে বাসটিকে আটক করে উজানীগাঁও গ্রামে নিয়ে রাখেন। নিহত দিলারা বিবি জয়কলস ব্রিজের উত্তরপাড়ে রাস্তায় ধান শুকাচ্ছিলেন। সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটগামী একটি বাস তাকে চাপা দিয়ে উপর দিয়ে চলে যায়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতাল নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। এদিকে একই উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়নের ঠাকুরভোগ সাপেরকোণা গ্রামে টাকা পাওনা নিয়ে জামাই-শ্বশুর পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে জামাইয়ের বড় ভাই খুন হয়েছেন। তার নাম সাজাদ মিয়া (৪০)। হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১০জন আহত হন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সাপেরকোণা গ্রামের আলাই মিয়া ও একই গ্রামের শ্বশুর রাজা মিয়ার কাছে টাকা পান। পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে শ্বশুর-জামাইয়ের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জামাই ও শ্বশুরের পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে জামাই আলাই মিয়ার বড় ভাই সাজ্জাদ মিয়া মারাত্মক আহত হন। তাৎক্ষণিক তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে রেফার করেন। হাসপাতালে নেয়ার পথে বিকেল সাড়ে ৩টায় সাজ্জাদ মিয়া মারা যান।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ওসি আল-আমিন বলেন, রোববার দুপুরে ডোবায় খেলতে নেমে মারা যায় তিন শিশু। বিকেলে স্বজনরা তাদের লাশ উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় নিহত শিশুদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এছাড়াও সংঘর্ষে এবং বাসচাপায় আরও দুইজন মারা গেছেন।
অন্যদিকে তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে তৌফিক মিয়া (২৬) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বাইন্যাগাঁও গ্রামের আ. নূরের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে আরো চার জন জেলের সঙ্গে চিতইল্যা বিলে মাছ ধরতে যান তৌফিক। মাঝ রাতে হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে মাছ ধরার নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় অন্যান্যরা সাঁতরিয়ে তীরে উঠলেও তৌফিককে পাওয়া যায়নি। গতকাল সোমবার সকালে বোয়াইল্যা বিলে ভাসমান অবস্থায় তাঁর লাশ দেখতে পাওয়া যায়। পরে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. হানিফ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জগাইরগাঁও পার্শ্ববর্তী সুরমা নদী থেকে পাবেল আচার্য্য (৩৫) নামে এক পল্লী চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পাবেল সুনামগঞ্জ শহরের পশ্চিম তেঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা বকুল আচার্য্যরে ছেলে।
সুনামগঞ্জ সদর থানার এসআই লুৎফুর রহমান জানান, গত শনিবার দুপুরে স্থানীয় ওয়েজখালি খেয়াঘাট এলাকায় সুরমা নদীতে গোসল করতে নামেন পাবেল। একপর্যায়ে তিনি পানিতে তলিয়ে যান। পরবর্তীতে তাঁর আত্মীয়-স্বজনসহ ফায়ার সার্ভিসের দল চেষ্টা করেও তাকে খুঁজে পায়নি। সোমবার দুপুরে জগাইরগাঁও গ্রামের পার্শ্ববর্তী সুরমা নদীতে তার লাশ ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পরে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।
এদিকে, ছাতকে এক কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের নাম অন্নি তালুকদার। সে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের অশোক রঞ্জন তালুকদারের কন্যা। অন্নি তার মামা ছাতক পৌর শহরের মধ্যবাজারের ভাড়াটিয়া রাজন দাসের বাসায় থেকে পড়াশোনা করতো।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অন্নি ছাতক ডিগ্রী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়তো। রোববার দুপুরে বাসার দু’তলার একটি কক্ষের ফ্যানের রডের সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে পরিবারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই রোববার রাতে লাশের সৎকার করা হয়।