বিশেষ প্রতিনিধি ::
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের মধ্যে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতভাগ ভর্তি বিষয়ক একটি প্রকাশনা শিক্ষা বিভাগের বোদ্ধা মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পরিশ্রমসাধ্য এই কাজটি প্রকাশ পাওয়ার পর এটিকে একটি মাইলফলক কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন প্রাথমিক ভর্তি বিষয়ক একটি সম্পূর্ণ প্রকাশনা প্রথম সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থেকেই প্রকাশ পেয়েছে। এই প্রকাশনার ফলে উপজেলার বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এই প্রকাশনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীদের নাম, আইডি, ঠিকানা ছবিসহ যুক্ত করা হয়েছে।
এর ফলে ওই এলাকার বাল্যবিয়ের প্রবণতা কমবে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি আনন্দ স্কুলসহ বিভিন্ন বেসরকারি বিদ্যালয়ের ছাত্র ভর্তি বিষয়ে দুর্নীতি কমবে। এতে সরকারের অতিরিক্ত অর্থ খরচ হবে না। গত ৮ এপ্রিল অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকাশনাটি উদ্বোধন করেন। তিনি পরিশ্রমসাধ্য ও গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সংশ্লিষ্ট এলাকায় শিশু জরিপ করে থাকে। জরিপ শেষে মাঠ জরিপের রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট উপজেলা অফিসে চলে আসে। কিন্তু জরিপ কাজে অসচ্ছতা, সমন্বয়হীনতার কারণে নানা সমস্যা তৈরি করে। এর ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ওভার লেপিং, জন্ম সনদের নাম ও বয়স পরিবর্তন করে বাল্যবিয়ের সুযোগ, ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা, অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় বই বিতরণসহ নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শতভাগ ভর্তি বিষয়ক এই প্রকাশনার ফলে উপর্যুক্ত সমস্যাগুলো অনেকটা কমে যাবে।
সূত্র জানায়, এই গবেষণা জরিপের নির্ভুল প্রকাশনার কারণে একই প্রতিষ্ঠানে একই শিশু ভর্তির আর সুযোগ পাবে না। ফলে সরকারকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে অতিরিক্ত বই বিতরণ করতে হবে না। ফটোসহ ভর্তি রেজিস্ট্রার প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল স্তরে বিনামূল্যে সরবরাহ করার ফলে বিদ্যালয়গুলোতে অভার লেপিং বন্ধ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। আগের মতো জন্মসনদের নাম ও বয়স পরিবর্তন করার সুযোগ না থাকায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তাছাড়া এই প্রকাশনার ফলে ইউনিয়ন পরিষদের জন্মসনদ সংগ্রহের প্রবণতা বাড়বে এবং সরকারি তথ্যও সঠিক থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি সম্পন্ন করার জন্য সিলেট বিভাগের মধ্যে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পরিমল চন্দ্র সিনহা বিশেষ উদ্যোগ নেন। সিলেট খাদিমনগরস্থ বিআরডিটিআই এ পাঁচদিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে এই কাজে আত্মনিয়োগ করেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত তিন দিনের কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে কাজ শুরু করেন। কঠিন এই কাজে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ৪০ হাজার টাকার অনুদান প্রদান করে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকাশনাটি উপজেলার প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী অফিস, পরিসংখ্যান অফিস, শিক্ষা অফিসসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হবে। সিলেট বিভাগে প্রথম এবং সারা বাংলাদেশে এটি একটি মাইলফলক কাজ বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার পরিমল চন্দ্র সিনহা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প-২০১২১ গঠনের ভিশনকে এই কাজটি উৎসর্গ করা হয়েছে। আমরা শিঘ্রই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে আমাদের পরিশ্রমসাধ্য এই কাজটি পাঠাবো। গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি করতে যাঁরা নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এই প্রকাশনার ফলে উপজেলায় বাল্যবিয়ের প্রবণতা কমবে বলে তিনি জানান।