গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠাটি মোট চৌদ্দটি সংবাদশিরোনামের সমাহারে সজ্জিত করা হয়েছিল। শীর্ষশিরোনাম ছিল “হাওরে শ্রমিক সংকট : বিপাকে কৃষক”। হাওরে প্রায় প্রতি বছরের বাস্তব চিত্র এটা। প্রতি বছর শিলাবৃষ্টিতে বোরো ফসলের ক্ষতি হয় আর সেই সঙ্গে হাওর ডুবতে থাকে। কাঁচা-পাকা কিংবা অর্ধপাকা ধান কাটতে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। ধানকাটার কাজটি শ্রমিকের জন্য তখন আর লাভজনক থাকে না। কেউ কাটতে আগ্রহী হয় না।
“হাওরে শ্রমিক সংকট : বিপাকে কৃষক” এই সংবাদ পরিবেশনের পর হাওরে ফসলরক্ষাবাঁধ ভাঙা, হাওর জলে তলিয়ে যাওয়া, বাঁধনির্মাণের কাজে অনিয়ম, অনিয়মের প্রতিকার, ভবিষ্যতে করণীয় ইত্যাদি সংক্রান্ত অর্থাৎ হাওরবিপর্যয় ও নিরসন সংশ্লিষ্ট আরও ছয়-ছয়টি সংবাদ ছাপা হয়েছে। সুনামগঞ্জের স্থানীয় অন্য দৈনিকগুলো এই হাওরবিপর্যয়কে সমধিক গুরুত্ব দিয়েছে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে।
আমরা জানতে পেরেছি, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সংবাদ সম্মেলন করে পাউবো’র কর্মকর্তা, পিআইসি ও ঠিকাদারদের হাওররক্ষাবাঁধ নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত টাকা লুটপাটের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। আমরা আরও জানতে পেরেছি, বিভাগীয় কমিশনার বাঁধনির্মাণে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি ভবিষ্যতে কীভাবে হাওরগুলো রক্ষা করা যায়, সে বিষয়ে কৃষক ও স্থানীয় প্রশাসনের পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। এইসব ইতিবাচক কর্মকান্ডের জন্যে সংশ্লিষ্ট সকলকেই আমরা অভিনন্দন জানাই।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিক বাস্তবতা এমন যে, এখানে যে কারও যে কোনও প্রকারের প্রতিশ্রুতিই শেষ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতির অধিক কিছু হয়ে ওঠে না। রাজনীতির কূটিলচক্রে পড়ে ও আমলাতান্ত্রিক কূটকৌশলের জটাজালে আবদ্ধ হয়ে দেশ ও দশের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে এমন প্রতিশ্রুতিগুলো বলতে গেলে মাঠে মারা যায়।
আমরা প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন, সমস্যার সমাধান প্রচেষ্টা গ্রহণ ইত্যাদির দিকে আপাতত নজর দিতে চাই না। হাওরের ফসলরক্ষা ও কৃষককে বাঁচানোর একটা মাত্র দাবি জেলাবাসীর পক্ষ থেকে করতে চাই, আর সেটা হলো সুরমা নদীর নাব্যতা যথেষ্ট পরিমাণে ফিরিয়ে আনা হোক। যতটা গভীর হলে সুরমা নদী চৈত্র-বৈশাখে বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানি নিষ্কাশনে সক্ষম হতে পারে ততটুকু খনন করা হোক। এ ব্যাপারে এর বেশি আর কিছু চাই না। হাওরের ফসলরক্ষার নির্বিকল্প উপায় একটাই- নদী খনন।