মাহমুদুর রহমান তারেক, শনির হাওর থেকে ফিরে ::
৫০ বছর বয়সী আলী হোসেন, নৌকা নিয়ে বার বার একই জায়গায় ঘুরছেন আর পানির দিকে তাকাচ্ছেন। কাছে গিয়ে ফসলের কথা জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘১৩ কিয়ার জমিতে ধান রইছলাম, এক ধাক্কায় ১০ কিয়ার তলাইয়্যা গেল, ভাবছিলাম পানির তল থাইক্যা কিছু ধান উঠানো যায় কিনা, তাই নৌকা নিয়ে আইছিলাম। ধান পানির অনেক নিচে তলাইয়্যা গেছে। বাকি ৩ কেয়ার কাটার লাইগ্যা কামলা (শ্রমিক) পাইতেছিনা।
আলী হোসেনের মতো হাজার হাজার কৃষকের কপাল পুড়েছে গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ, শিলাবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে। গত সোমবার রাতে জেলার সর্ববৃহৎ শনির হাওরের নান্টুখালি বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যেতে শুরু করে হাজার হেক্টর বোরো ফসল। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের। সারা বছরের একমাত্র খাবারের উৎস বোরো ফসল হারিয়ে হাহাকার করছেন। বাঁধ ভাঙার জন্য দায়ী পাউবো ও ঠিকাদারের শাস্তিও দাবি করেছেন তাঁরা।
হাওরের কৃষক আকবর আলী বলেন, সোমবার থেকে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে। ক্ষেতে ধান এখনো আধা পাকা, তলিয়ে যাবার ভয়ে বাধ্য হয়ে ধান কাটা শুরু করেছি।
আসকর আলী নামের আরেক কৃষক বলেন, ধান কাটার জন্য শ্রমিক খোঁজে পাচ্ছি না, ৬০০-৮০০ টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এখন বাধ্য হয়েই নিজেই ধান কাটায় লেগে গেছি।
সিলেটে বসবসাকারী চাকরিজীবী টিটু রঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, ধান তলিয়ে যাবার খবর পেয়ে বাড়িতে এসেছি। আমার এক হালের মত জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। বাকিগুলো যা আছে তা শ্রমিক সংকটের কারণে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাটছি।
কৃষক হরি দাস বলেন, শ্রমিক সংকটের কারণে বাচ্চাদের কয়েক দিন ধরে স্কুলে পাঠাচ্ছি না। মা, বউ, বাচ্চা সবাই এখন আমার সঙ্গে ধান কাটা থেকে শুরু করে শুকানোর কাজ করছে।
ধান কাটার শ্রমিক আমির বলেন, হাওরে ধান কাটার কামলা (শ্রমিক) অনেক কম। রোজ ৭০০টাকায় ধান কাটার কাজ করছি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন বলেন, শনির হাওরের বাঁধ ভাঙার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়ী। তাদের খামখেয়ালিপনার কারণেই বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ফসল হারিয়ে হাওরের কৃষকরা এখন অসহায়। চারদিকে ফসল হারানোর হাহাকার। সাধ্যমত চেষ্টা করছি, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর। বাঁধ ভাঙার জন্য পাউবো এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়ি। বাঁধ ভাঙার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছি। শ্রমিক সংকট থাকলেও কৃষকদের অনুরোধ করছি যেভাবেই হোক দ্রুত ধান কেটে ফেলার।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো. জামাল উদ্দিন বলেন, আমি ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়েছি। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে অবহিত করবো। শ্রমিক সংকটের বিষয়টিও অবগত হয়েছি।