সাজ্জাদ হোসেন শাহ্ ::
শেষ রক্ষা হলনা শনির হাওরের বোরো ফসলের। কৃষকের চোখের সামনেই বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ১২ হাজার হেক্টর জমির সোনালী ফসল। ফলে জেলার তিন উপজেলা তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুরের শতাধিক গ্রামের কৃষক পরিবারে আহাজারি থামছে না।
গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণে নি¤œমানের কাজ হওয়ায় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় হাওর শনির হাওরের প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমির ধান।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, সোমবার রাতে তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের অংশের রাজধরপুর গ্রামের লালুরগোয়ালা বাঁধ ভেঙে তিন উপজেলার প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এর আগে হাওরের ঝালখালি ও নান্টু খালি বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢোকা শুরু হয়। তখন তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় কৃষকসহ এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় বালিভর্তি স্টিলবডির বড় নৌকা দিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ বন্ধ করানোর প্রাণপণ চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু এত কিছুর পরেও শেষ রক্ষা হয়নি শনির হাওরের। কৃষকের চোখের সামনেই পানিতে তলিয়ে যায় হাওরের বোরোধান।
তাহিরপুর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হচ্ছে বালিজুরী ইউনিয়নের চিকসা, বারুঙ্কা, পাতারি, তিওরজালাল, লোহাচূড়া, আনোয়ারপুর, বালিজুরী, তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের দুতমা, মধ্যতাহিরপুর, উজানতাহিরপুর, ভাটিতাহিরপুর, ঠাকুরহাটি, গোবিন্দশ্রী, শাহাগঞ্জ, শ্রীপুর, নিশ্চিন্তপুর, সুলেমানপুর, রামজীবনপুর, জামালগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর, রাধানগর, ইসলামপুর, মশলঘাট, শাহাপুর, রাজীনপুর, সাতগাঁওসহ প্রায় শতাধিক গ্রাম।
শনির হাওরপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, ঋণ করে জমি করেছিলাম। এখন আর কিছুই রইল না। এই ক্ষতি পূরণ হবার নয়।
কৃষক লতিফ মিয়া বলেন, ভারি বর্ষণ, শিলাবৃষ্টি আর ঢলে আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। পরিবার নিয়ে আমরা পথে বসেছি। বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম করায় পাউবো সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দাবি করেন।
চিকসা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দু রহিম বলেন, শনির হাওর এভাবে তলিয়ে যেতে দেখিনি। পানির অল্প ধাক্কাতেই এবার নড়বড়ে বাঁধ ভেঙে গেছে। বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তাহিরপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান বুরহান উদ্দিন বলেন, জেলার সবচেয়ে বড় হাওর এই শনির হাওর এতো সহজে পানিতে তলিয়ে যেতে আগে দেখিনি। হাওর রক্ষা বাঁধগুলো নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। নি¤œ মানের বাঁধ হওয়ায় পানির অল্প ধাক্কাতেই তা ভেঙে গেছে।
বালিজুরী ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, আমরা সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করাসহ হাওরের বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুস ছালাম জানিয়েছেন, তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী, দক্ষিণ শ্রীপুর, তাহিরপুর সদর এ তিনটি ইউনিয়নে ৬হাজার ৩শ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদুল্লাহ্, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল আমিন বলেছেন, এলাকাবাসীকে নিয়ে গত তিন দিন প্রাণপণ চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা যায়নি শনির হাওর। নি¤œমানের বাঁধ নির্মাণ করায় সামান্য ধাক্কাতেই হাওরের সোনালী ফসল তলিয়ে গেছে।